নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( তৃতীয় পর্ব)

মানব জাতির ইতিহাসের দিকে থাকালে আমরা দেখতে পাই দুইটি বড় বিষয় বা দ্বন্দ্ব সকল সময়েই মানুষকে কষ্ট দিয়েছে; তাই এই বিষয় সমূহ আমাদেরকে ভালোকরে বুঝে নিতে হবে। এই বিষয় গুলো বাহিরের জিনিষ নয় বরং আমাদের ভেতরেরই জিনিষ। আর এই গুলো হলো, সামাজিক এবং ব্যাক্তিগত প্রবৃত্তি । ব্যাক্তি ও সমাজ বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, তবে সকল সময়েই এদের মধ্যে চলে এসেছে দ্বন্দ্ব ও লড়াই।

Submitted by akmshihab on April 5, 2018

নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( তৃতীয় পর্ব)

এ কে এম শিহাব

এনার্কিজম বা নিরাজবাদ হলো এমন একটি রাজনৈতিক মতবাদ যা মানুষের উদ্ভাবিত মতবাদ হিসাবে মানবিক ও সার্বিক স্বাধীনতার কথা বলে; যা সকল প্রকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে, সকল সহিংসতা, ও চাপিয়ে দেয়া আইন কানুন এবং ক্ষতিকর পরিস্থিতি থেকে মানুষকে মুক্ত করে দেয়। ইহা সরকার কে একটি অদরকারী প্রতিস্টান মনে করে।

এই নয়া জীবন ব্যবস্থা মানুষকে সকল প্রকার কুসংস্কারমুক্ত ও ভাবাবেগের ভেতর থেকে বেড় করে আনে, ইহা মানুষের জীবন ব্যবস্থার প্রতিটি দুষ্ট ক্ষত সারিয়ে তুলে। সমাজের বড় দুষ্ট ক্ষতটি হলো,- অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা। এনার্কিজম মানব জীবনের প্রতি স্তরের বিষয় গুলো সবিশেষ বিবেচনায় নিয়ে থাকে- ব্যাক্তিগত ও সামস্টিগত এবং বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সব কিছুর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে থাকে।

মানব জাতির ইতিহাসের দিকে থাকালে আমরা দেখতে পাই দুইটি বড় বিষয় বা দ্বন্দ্ব সকল সময়েই মানুষকে কষ্ট দিয়েছে; তাই এই বিষয় সমূহ আমাদেরকে ভালোকরে বুঝে নিতে হবে। এই বিষয় গুলো বাহিরের জিনিষ নয় বরং আমাদের ভেতরেরই জিনিষ। আর এই গুলো হলো, সামাজিক এবং ব্যাক্তিগত প্রবৃত্তি । ব্যাক্তি ও সমাজ বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, তবে সকল সময়েই এদের মধ্যে চলে এসেছে দ্বন্দ্ব ও লড়াই। সমাজের সকলেই কে কার চেয়ে বড় এই একটি মানসিকতা সকল সময়েই বিরুধের সূত্রপাত করেছে। আবার একজন আরেকজনের থেকে বড় হবার জন্য চেস্টায় লিপ্ত হয়েছে। মানুষ একে অন্যের মূল্যায়নে অন্দ্ব থেকে গেছে। ব্যাক্তি ও সামাজিক প্রবৃত্তি যেমন, উন্নয়ন, আগ্রগতি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা স্ব-উপলব্দি ইত্যাদি এগিয়ে যাবার জন্য সহায়ক এবং দ্বন্দ্বে কারন হয়েছে । তা আবার, সামাজিক কল্যানের জন্য ও সহায়ক হতে পারে।

মানুষের জিজ্ঞাসা সমূহ খোঁজার জন্য বেশী দূরে যাবার দরকার নেই। আদিম কালে মানুষ অনেক কিছুই বুঝতে পারত না। তারা অজ্ঞাত ও লুকানো কোন শক্তির পুতুল হিসাবে নিজেকে মনে করত। তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতা ও শক্তি সম্পর্কে সচেতন ছিলো না । তারা সেই অজ্ঞাত শক্তির সন্তুষ্টির জন্য চস্টা করত। যার ফলে ধর্মীয় ভাব ধারা ও আচার আচরনের উৎপত্তি হয়। প্রথম দিকে তা ঘুর্নি ঝড়ের বালি কনার মত শুরু হলে ও পরে তা প্রকটতর হয়। তারা সেই শক্তির নিকট পূর্ন সমর্পনের মধ্যেই নিজেদের মুক্তি খোজতে থাকে । এর ই ধারাবাহিকতায় ইশ্বর, গির্জা, রাষ্ট্র, সমাজ ইত্যাদির উন্মেষ ঘটে। তারা ধরে নেয় সকল ক্ষমতা ও শক্তি আধারই হলো সেই অজ্ঞাত শক্তি। সেই শক্তির নিকট নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই রয়েছে মানুষের সামগ্রীক কল্যান ও গৌরব। মানুষের ধারনা ছিলো তাঁদের নিজের কোন ক্ষমতা নেই সকল ক্ষমতা ঐ লুকানো শক্তির। কিন্তু আসল সত্য হলো মানুষ নিজের সম্পর্কে সচেতন হলে বা নিজেই জেগে উঠলে দুনিয়ায় অভাবনীয় কর্ম সম্পাদন করতে পারে।

এনার্কিজম বা নিরাজবাদ হলো একমাত্র দর্শন যা মানুষকে ব্যাক্তিগত ভাবে সচেতন করে দেয়; এটা বলে দেয় প্রভু, রাষ্ট্র, সমাজ আসলেই অস্থিত্বহীন বিষয়। এই গুলো মানুষের নিকট অনেক প্রতিশ্রুতি শোনায় বাস্তবে কিছুই করে না । এই গুলো কেবল মানুষের আনুগত্য হাসিলের জন্য চেস্টায় লিপ্ত থাকে। নিরাজবাদ হলো মানব জীবনের মহান শিক্ষক, যা জীবনের ঐক্ষ্য শিক্ষা দেয়। মূলত ব্যাক্তি ও সমাজের মধ্যে কোন বিরুধ নেই। এই গুলো হলো মানব দেহের হার্ট ও ফুসফুসের মত। এর একটি হলো জীবন ঠিকিয়ে রাখার অঙ্গ আর অন্যটি হলো শরীরে বিশুদ্ব অক্সজেন সর্বরাহ করে তাঁকে শক্তিশালী করে রাখার অঙ্গ। ব্যাক্তি হলো সমাজের হার্ট আর ফুসফুস হলো সমাজ যা ব্যাক্তি মানুষের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে ।

Comments

Related content