এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ -সিন্ডিক্যালিজমের অগ্রদূতেরা (১ম কিস্তি)

প্রাথমিক স্তরের সমাজবাদি ভাবধারায় গড়ে উঠা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে আমাদের বর্তমান বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম আন্দোলনের একটি গভীর যোগসূত্র আছে। এই ভাবধারাটি প্রথমিক ভাবে বিরাট শিল্পের মাতৃভূমি ইংল্যান্ডে সূত্রপাত হয়, এবং পরে ইংলিশ শ্রমিক শ্রেনীর নানা বিভাগের মাঝে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। কম্বিনেশন আইন বাতিলের পর শ্রমিক শ্রেনী বৃহত্তর পরিসরে তাঁদের ট্রেড ইউনিয়ন গুলো শক্তিশালী করার সুযোগ পায়, এত কাল তাঁদের স্থানীয় বা স্ব স্ব কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা তাঁরা অর্জন করেছে তা এখন বৃহত্তর পরিসরে কাজে লাগাবার সুযোগ পায় ।

Submitted by akmshihab on June 3, 2018

গ্রন্থঃ এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ

মুল লিখকঃ রুডলফ রকার, অনুবাদঃ এ কে এম শিহাব

তৃতীয় অধ্যায়ঃ সিন্ডিক্যালিজমের অগ্রদূতেরা (১ম কিস্তি)

প্রাথমিক স্তরের সমাজবাদি ভাবধারায় গড়ে উঠা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে আমাদের বর্তমান বিপ্লবী সিন্ডিক্যালিজম আন্দোলনের একটি গভীর যোগসূত্র আছে। এই ভাবধারাটি প্রথমিক ভাবে বিরাট শিল্পের মাতৃভূমি ইংল্যান্ডে সূত্রপাত হয়, এবং পরে ইংলিশ শ্রমিক শ্রেনীর নানা বিভাগের মাঝে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। কম্বিনেশন আইন বাতিলের পর শ্রমিক শ্রেনী বৃহত্তর পরিসরে তাঁদের ট্রেড ইউনিয়ন গুলো শক্তিশালী করার সুযোগ পায়, এত কাল তাঁদের স্থানীয় বা স্ব স্ব কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা তাঁরা অর্জন করেছে তা এখন বৃহত্তর পরিসরে কাজে লাগাবার সুযোগ পায় । প্রথমিক আন্দোলনের মধ্যে সামাজিক রাজনৈতিক বিষয় গুলো গভীর ভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। তবে সেই সময়ে শ্রমিকগন রাজনৈতিক সংস্কার মুলক কাজের সাথে কিছু কিছু পরিচিত ছিলেন। তবে তাঁদের আর্থ সামাজিক আমূল পরিবর্তনের কোন লক্ষ্য স্থির করা হয়নি। এমন কি ত্রিশের দশকের আগে পর্যন্ত সমাজবাদি ভাবধারা সত্যিকার অর্থে প্রভাবিত করতে পারে নাই । সেই সময় কাল পর্যন্ত ব্যাপক অংশের শ্রমিক জন গুষ্টি রবার্ট ওয়েনের মতবাদেই আস্থাশীল ছিলেন।

পার্লামেন্টে জাতীয় শ্রমিক ইউনিয়ন সংক্রান্ত তথাকথিত সংস্কার আইন পাশের আগে পর্যন্ত, কেবল বস্ত্র শিল্পের শ্রমিকগনের মধ্যে একটি অগ্রসর অংশ বৈপ্লবিক ভাবধারা পোষন করতেন। সেই পরিস্থিতে তাঁরা মাত্র চারটি উল্লেখযোগ্য দাবী মালিক পক্ষের সামনে উত্থাপন করেনঃ

১। একজন শ্রমিককে তার প্রকৃত শ্রমের মূল্যদিতে হবে;

২। শ্রমিকদেরকে সামগ্রীকভাবে তাঁদের কাজের সূরক্ষা দিতে হবে, যেন নিয়োগ কর্তা কোন ভাবেই তাদের সাথে অন্যায় আচরন করতে না পারে;

৩। পার্লামেন্ট সংস্কারের মাধ্যমে সকল নারী পুরুষের কষ্ট লাগবের ব্যবস্থা নিতে হবে; এবং

৪। অর্থনৈতিক সমস্যার উপর শ্রমিকদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কারের কথা তুলে ধরে বলা হয়, সকল স্বৈরাচারী ব্যস্থার অবসান ঘটিয়ে সমগ্র দেশকে একেই বিধি বিধানের আওতায় আনতে হবেঃ এই কথার মাধ্যমে এটা প্রকাশ পায় যে শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা তখনো রবার্ট ওয়েনের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আছেন ।

১৮৩২ সালের সংস্কার বিল, ও চলমান রাজনৈতিক ধোঁয়াশা ইংলিশ শ্রমিক শ্রেনীর একটি বিরাট জোটকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিলো। যখন বিলটি আইনে পরিণত হল তখন দেখা গেল মধ্যবিত্ত শ্রেনী ভূমি মালিকদের উপর বেশ কিছু সবিধা পেলে ও শ্রমিক মজুরদের সাথে আবারো বিশ্বাস ঘাতকতা করা হয়েছে । বুর্জোয়া শ্রেনীর লোকেরা তাদেরকে এক অগ্নি গহব্বরের দিকে টেনে নিয়ে গেছে । ফলে এটা তখন আরো দিবালকের মত স্পষ্ট হলো যে, শ্রমিক শ্রেনী বুর্জোয়া শ্রেনীর জোটের নিকট থেকে কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই । এর আগে স্বতস্ফুর্ত ভাবে শ্রমিক শ্রেনীর আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারন করেছিলো, সেই আন্দোলনে অনেক ধনী গরীব,মালিক শ্রমিক নানা শ্রেনীর মানুষ যুক্ত হয়, কিন্তু এই ঘটনার পর শ্রমিক শ্রেনীর মনে নতুন ভাবনার সৃষ্টি হয়। তাঁরা তখন বুঝে গেল শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ ছাড়া তাঁদের স্বার্থ অন্য কেউ দেখবে না । তাঁরা তাঁদের সত্যিকার শক্তি ও দূর্বলতা চিহ্নিত করার প্রায়স চালায়। শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা তখন সংস্কার মূলক আন্দোলনে অংশ গ্রহনের ক্ষেত্রে আরো বেশী সচেতন হয়, নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামের ক্ষেত্রে ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্বি পায়।

রবার্ট ওয়েনের প্রচারনার উপর তাঁদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়, যার সংগঠিত শ্রমিক শ্রেনীর উপর প্রতিনিয়ত প্রভাব বৃদ্বি পেতে থাকে । ওয়েন স্বীকার করেন যে সরল ভাবে যে সকল শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠছে, তাদেরকে অর্থনৈতিক ভিত্তি উপর দাঁড় করতে হবে এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির মৌলিক নীতিমালা সংশোধনের জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে । তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে এই বিশ্বাসের উপর খুব জোর দিতেন । তিনি দেখান যে, পুঁজি ও শ্রমের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান আছে তা কোন সাধারন আন্দোলন সংগ্রাম দিয়ে সমাধান হবে না, তাই তিনি কোন ভাবেই আমূল পরিবর্তনকামী লড়াই সংগ্রামের বিষয়কে কম গুরুত্বদেননি । অন্য দিকে তিনি শ্রমিকদেরকে বলেছেন আইনগত ভাবে খুব বেশী কিছু পাওয়া যাবে এমন আশা করে কোন লাভ নেই । সামগ্রীক মুক্তি তখনই মিলবে যখন শ্রমিক সকল কিছুর দায়িত্ব নিজদের হাতে নিতে পারবেন । এই ধারনাটি ইংরেজ প্রাগ্রসর শ্রমিক শ্রেনীর অনেকেই গ্রহন করেন, আর সেই ধারনাই তাঁদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ের প্রেরনা যোগায় । নির্মান শ্রমিকদের ইউনিয়ন স্থানীয় ভাবে ও কম শক্তিশালী ছিলো না, তাঁদের সংগঠন সমূহ ও কোন ভাবেই পিছিয়ে থাকেনি। তাঁদের শক্তি সামর্থ নিয়োগ কর্তাদের কাঁপিয়ে দেবার মত অবস্থায় ছিলো।

১৮৩১ সালে ওয়েন ম্যানচেস্টারের এক সভায় উপস্থিত সদস্যদের সামনে একটি সমাজ পূর্গঠন মূলক পরিকল্পনা পেশ করেন। সেই পরিকল্পনায় তিনি সমাজবাদি কাউন্সিলের প্রস্তাব করেন, যেখানে তিনি উৎপাদক শ্রেনীর সমবায় সমিতি গঠনের প্রাস্তাব করেন যা নিয়ন্ত্রিত হবে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে । তার সেই প্রস্তাব সভায় গৃহিত হয়, এবং নির্মান শ্রমিকগন কিছু দিনের মধ্যেই মালিক পক্ষের সাথে দির্ঘ সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে, সেই সময়ের অসন্তোষ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে শ্রমিকদের সংগঠন হুমকির মুখে চলে যায় এবং ফলে ওয়েন বাধ্য হয়ে আন্দোলনের রাশ টেনে ধরেন। ফলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে।

রবার্ট ওয়েন এই পরিস্তিতিতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন নাই, কিন্তু তিনি নিজের হতাশা কাটিয়ে নয়া উদ্যমে পুনরায় কাজ চালিয়ে যান। ১৮৩৩ সালে লন্ডনে তিনি এক সম্মেলনের ডাকদেন, এতে ট্রেড ইউনিয়ন ও সমাবায় সমিতি সমূহকে যোগদানের আহবান জানান। সেই সম্মেলনে তিনি তার নয়া পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করে যেখানে ছিলো সামাজিক সংস্কারের বা পুনর্গঠনের নয়া নক্সা । সেই সম্মেলনের প্রতিনিধিদের প্রতিবেদন সমূহ পাঠ করলে সহজেই একজন লোক বুঝতে পারবেন যে, ইংরেজ অগ্রসর শ্রমিকদের উপর ওয়েনের চিন্তার প্রভাব কত তিব্রতর ছিলো । দি ফোর ম্যানস গার্ডিয়ান পত্রিকা সংক্ষিপ্ত আকারে সম্মেলনের প্রতিবেদন গুলো তুলে ধরেন এই ভাবেঃ

“ সাবেক কম্বিনেশন আইনের সাথে এই সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে উঠে আসা উদ্দেশ্য সমূহের লক্ষ্যের কিছু পার্থক্য স্পস্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তাদের প্রতিবেদন সমূহ সামগ্রীক সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কথা বলছে – তাঁরা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত বিশ্ব ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবী করছে- আর তা করতে হবে শ্রমিক শ্রেনীকেই । তাঁরা সমাজের উঁচু তলার মানুষের জন্য তা করবেন না, করা হবে নিচু তলার সাধারন মানুষের জন্য – বা উঁচু নিচু নয় সকলের জন্য সামাজিক পরিবর্তন করতে হবে”।

এই সম্মেলনের ফলে ১৮৩৪ সালের প্রারম্ভেই গ্র্যান্ড ন্যাশনাল কনসোলিডেটেড ট্রেড ইউনিয়ন অব গ্রেট ব্রিটেন এন্ড আইয়ারলয়ান্ড গঠিত হয়। সেটা ছিলো উৎসাহ ও উদ্দীপনার সময়। সেই সময় সমগ্র দেশ অসংখ্য ধর্মঘট, লক আউট ও হরতালে ছিলো উত্থাল। এবং বিপুল পরিমাণ শ্রমিক সেই সময়ে ইউনিয়নের সদস্য পদ গ্রহন করতে এগিয়ে আসেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রায় ৮০০,০০০ শ্রমিক সদস্য ভূক্ত হন। জি,এন,সি প্রতিস্টার পর পর ই তাঁরা উদ্যোগী হয়ে ছোট বড় নানা স্থানে গঠিত সংগঠন সমূহকে নিয়ে একটি ফেডারেশন গঠন করেন। যা শ্রমিক শ্রেনীর শক্তি সামর্থ বাড়িয়ে দেয় ফলে তাঁরা যে কোন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়ে উঠেন । কিন্তু তাঁদের এই বিশাল সংগঠন সত্যিকার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন নাই, এমন কি শ্রমিকদের সত্যিকার সংহতি, ইউনিয়নিজম, বা পারস্পরিক সহযোগীতার ক্ষেত্র ও প্রস্তুত করতে, এবং রাজনৈতিক সংস্কার মূলক কিছুই করতে পারে নাই । দি জি, এন, সি স্ব স্ব দেশে শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মান বাড়ানোর জন্য নিজেকে একটি লড়াকু সংগঠন হিসাবে গড়ে তুল, সাথে এই কথা ও ঘোষনা করে যে তাঁরা পুঁজিবাদের শিকর উপড়ে ফেলতে চায়, আর সেই খানে তাঁরা উৎপাদক শ্রমিকদের সমবায় ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চায়, যেখানে কোন ব্যাক্তি নিজের জন্য কোন মুনাফা করার সুযোগ পাবেন না, উৎপাদন হবে সকলের চাহিদা পুরনের জন্য । জি এন সি সেই সময় ঘোষণা দেয় তাঁরা তাঁদের লক্ষ্য বাসতবায়নের জন্য যা যা করনীয় তা করতে কিছুতেই পিছপা হবেন না ।

ফেডারেশন গড়ে তুলার উদ্যোক্তাগন চাইছিলেন শিল্পকারখানা, কৃষি উৎপাদনকারী প্রতিস্টান সমূহকে একটি ছাতার আওতায় এনে প্রতিটি উৎপাদন সংক্রান্ত বিশেষ বিভাগ খোলে সামগ্রীক উৎপাদন ও বন্ঠন প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবেন । প্রতিটি শিল্প কারখানা বিশেষ বিভাগের আওতায় তাঁদের উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাবে। এবং যেখানে যেখানে সম্ভব সেখান থেকে শ্রমিকগনকে নিয়ে এসে সমবায় সমিতিটি পরিচালনা করবে, যারা পরিচালনাগত খরচ সহ প্রকৃত উৎপাদন খরচ অনুসারে পন্য সমূহ ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করবেন। সার্বজনীন সংগঠন সমূহ কোন একটি শিল্প কারখানার সাথে যুক্ত হবে এবং তাঁদের কার্যক্রম সকলের স্বার্থে পরিচালিত হবে । পন্য বিনিময় করার ক্ষেত্রে তথাকথিত শ্রমবাজার হয়ত কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে –সেই ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থ বা শ্রম টিকেটের ব্যবস্থা থাকতে পারে। স্থির প্রতিস্টানিক সম্প্রসারনের জন্য তাঁদের মধ্যে আশঙ্কা ছিলো যে, সেই ক্ষেত্রে পুঁজিবাদের সাথে প্রতিযোগীতায় সামাজিক পুনগঠনের দরকার হতে পারে ।

সাথে সাথে তাঁরা এই কথা ও বুঝতে পারছিলেন যে, কৃষি খামার ও শিল্প কারখানায় শ্রমিকগন সহজেই দৈনিন্দিন লড়াইয়ে পুজিবাদকে পরাস্ত করে দিতে পারবেন। এই বিষয়ে তাঁরা তাঁদের সাত দফার মধ্যে তিন দফাতেই বক্তব্য রেখেছেন। জি এন সি তার জন্ম লগ্নেই এই বিষয়ে বক্তব্য জনতার সামনে হাজির করেছিলোঃ

“ জমিই হলো জীবন প্রবাহ ঠিকিয়ে রাখার প্রথমিক ও প্রধান সহায়ক উৎস, সুতরাং এর মালিকানা অর্জন করা ছাড়া, উৎপাদক শ্রেনীর লোকেরা পুঁজিবাদী শ্রেনীর সাথে প্রতিযোগীতায় ঠিকতে পারবে না, ব্যবসা বানিজ্যে সকল সময়েই উঠা নামা আছে, তাই কমিটি এই প্রস্তাব করছে যে জমি লিজ নিয়ে ইউনিয়নের কার্যক্রমের ভিত্তিকে মজবুত করতে হবে, সেই জন্য কর্মে নিয়োগকৃত একটি অংশ সকল সময়েই উৎপাদনে জড়িত থাকতে হবে, যদি তা না করা হয় তবে কৃষি ক্ষেত্রে যেমন ভূমি লিজের শর্ত ভঙ্গ হবে অন্য দিকে পন্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, কেন না উৎপাদন, সরবরাহ এবং ভোগের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতেই হবে”।

“ কমিটি অত্যন্ত দৃঢ় চিত্যে ঘোষনা করছে যে, দাবী দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে প্রচলিত ব্যবস্থার আওতায় ধর্মঘট করতে হবে, লোকেরা কাজ করছে, উৎপাদন করছে, পন্য তৈরি করছে সকলের জন্য, তাঁদের জন্য তৈরি করেছে একটি জোট তা হল ইউনিয়নঃ তাঁরা তাঁদের ভাই বোনদের জন্য আন্ত্রিক ভাবে পন্য তৈরি করছে। তাঁরা যদি সমস্যায় পড়েন, কর্ম ক্ষেত্রে, বিক্রয় কেন্দ্রে যদি অব্যবস্থাপনার শিকার হন তবে অবশ্যই তাঁদের ও উৎপাদনে বাঁধা দেবার, সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করার অধিকার আছে । উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাস্তব সম্মত ও ব্যাপক আকারে বিকেন্দ্রীকরনের ও কাঁচামাল এবং পন্য দ্রব্য সরবরাহের ব্যবস্থা করবে।

“ যখন যেখানে সম্ভব , প্রতিটি জেলায় এক এক টি করে সংরক্ষনকারী গুদাম ঘর নির্মান করা হবে, গৃহস্থালী পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য সেই গুদামে মালামাল সংরক্ষিত থাকবেঃ আর সেখান থেকেই উৎপাদন খরচের উপর ভিত্তিকরে মালামাল বিক্রি করা হবে”।

জি এন সি ও তার প্রতিস্টাতাগন ট্রেড ইউনিয়ন এবং সমবায় বলতে সকলের জন্য কল্যাণ বুঝতেন। বাস্তবে সমাবায় ও ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনায় অংশগ্রহন করে শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা জ্ঞান অর্জন করবে কেমন করে শিল্প কলকারখানা পরিচালনা করতে হবে, উৎপাদন ব্যবস্থা যঝন তাঁদের নিয়ন্ত্রনে আসবে তখন কেমন করে পরিচালনা করতে হবে তা শিখবে এবং সত্যিকার শোষন প্রক্রিয়া গুলো সম্পর্কে হাতে কলমে শিখে ও বুঝে নিবেন উৎপাদক শ্রমিক শ্রেনী। এই ধারনা গুলো শ্রমিক সভা সমাবেশে ও প্রেসের সামনে দৃঢ় ভাবে তুলে ধরা হবে । উদাহরন হিসাবে বলা যায় যে, দি পায়নিয়ার হিসাবে জি এন সি পরিচালিত জেমস মরিসনের পুনঃ পুনঃ বক্তব্য উপস্থাপন ও প্রতিউত্তর বাস্তব আধুনিক জ্ঞানকে সমৃদ্ব করেছে। রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য এই ধরনের আলোচনা খুবই কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় বিষয়। বিরুধী পক্ষের বক্তব্য ছিলো অর্থনৈতিক পরিবর্তনে শ্রমিক শ্রেনীর কোন ভূমিকা নেই, এতে তাঁদের কোন স্বার্থ ও নেই- সমাজবাদের সূত্র উল্লেখ করে তাঁরা হাউজ অব কমন্সে এই ধরনের বক্তব্যই দিচ্ছিলো । এই ধরনের হাউজের পরিবর্তে ফেডারেশন গড়ে তুলা হবে, এই গুলো জনসাধারনের স্বার্থকে ধারন করেনা , এঁরা হাজারো সমস্যার জন্মদাতা । এঁরা যেমন উৎপাদনের শত্রু এঁরা ভোগের ও শত্রু । এই সংগঠন সমূহ বর্তমান প্রচলিত ব্যবসা বানিজ্যে হাল ধরবে; আর অন্যান্য সকল সাধারন সম্পত্তির অধিকার নিজেদের হাতে নিয়ে নিবে । তখন কোন রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্রের দরকারই হবে না । জাতীয় সম্পদ তখন আর পরিমাণ দিয়ে নির্ধারন করা হবে না । বরং মানুষ কত টুকু সন্তুষ্ট আছে তা দিয়ে নির্ধারিত হবে । এখন যে হাউস অব কমন্স আছে তা হাউজ অব ট্রেড হিসাবে গন্য হবে।

জি এন সি গঠিত হবার পরই ব্যাপক সারা পায় শ্রমিক শ্রেনীর পক্ষ থেকে। কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ এর সদস্য হিসাবে নাম লিখায়, যদি এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রাথমিক ভাবে শ্রমিক ও বুদ্বিজীবী মহলের অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন, তবে তাঁরা এর বাহিরে থাকতে পারছিলেন না, কম পক্ষে সকলের এর উত্থাপিত দাবী ও বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে চলছিলেন। দশ ঘন্টার হরতাল পালনে তাঁদের শক্তি পরিক্ষা হয় এবং সকল শ্রমিকের মধ্যে এর সারা জাগে। জিএন সি তাঁদের দাবী আদায়ের জন্য সর্ব শক্তি নিয়োগ করে মাঠে নামে । ওয়েন নিজে এবং তার গনিস্ট বন্দ্বু ডরতি, ফিল্ডেন ও গ্রান্ট আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তবে জি এন সি র কার্যক্রমে যে জংগীপনা দেখা গেল তা দেখে পার্লামেন্ট সদস্যরা ও কিছু নমনিয় হয়ে পড়েন। তবে তাঁরা শ্রমিক শ্রেনীর লোকদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে, তাঁরা বলেন, এই দশ ঘন্টার হরতাল সামগ্রীক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলবে। “ তাঁরা বলেন, পুর্নবয়স্ক লোকদেরকে নিয়ে ইউনিয়ন গঠিত হবে এই মর্মে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিল পাশ করা হবে”। এটাই পরে স্লোগানে পরিণত হয়।

ধর্মঘটের ধারনাটি নানা ভাবে বিভক্ত শ্রমিকদেরকে এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ব করে, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। ১৮৩২ সালে, ইউলিয়াম বেনবো, সেই নয়া আন্দোলনের একজন অত্যন্ত সফল প্রচারক একজন ব্যাক্তি, তিনি একটি চমৎকার পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিলো গ্যান্ড ন্যাশনাল হলিডে এবং কংগ্রেস অব দি প্রোডাক্টিভ ক্লাসেস, পুস্তিকাটি ব্যাপক ভাবে প্রচার ও করা হয়।সাধারন ধর্মঘটের ধারনার উদ্ভাবন ও চর্চা শ্রমিক শ্রেনীর গুরুত্ব সর্বমহলে নাড়া দেয়। বেনবো বলেন, যদি শ্রমিকদেরকে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য করা হয় তবে তা হবে দাসত্বের নামান্তর, তাই তাঁদের নিজেদেরকে সংগঠিত করে নিজেদের স্বাধীকার নষ্ট এমন কোন কাজে জড়িত হওয়া যাবে না । এই ধরনের লড়াইয়ের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে শারিরীক শক্তির দরকার হয় না, অনেক ক্ষেত্রে কোন কাজ না করে ও উন্নত সৈনিকের লড়াইয়ের চেয়ে ও বেশী উপকার পাওয়া যায় । প্রচলিত ব্যবস্থার পতন ঘটাতে, শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করতে, এই পদ্বতি একটি বুদ্বিবৃত্তিক পথ ও পন্থা । বেনবো আরো অগ্রসর প্রস্তাব পেশ করেন, এই ধরনের ধর্মঘট জাতীয় কর্মসূচী পালনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সমগ্রদেশে পরিকল্পনা করতে হবে । যা সকল দেশকে অচল করে দেয়া যায়, এই কর্ম সূচী পালিত হবে শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের হ্রদয় থেকে উৎসারিত হয়ে, তা কোন ভাবেই চাপিয়ে দেয়া হবে না ।

জি এন সি এর দ্রুত সম্প্রসারন এবং এর চেতনা শ্রমজীবী মানুষের মাঝে যুগ যুগ ধরে চলে আসা মালিক ও নিয়োগকারীদের প্রতি ঘৃনা ও ভীতি দূরীভূত হতে লাগল । তাঁরা অনুভব করলেন তাঁদের আন্দোলনকে আরো আগ্রসর করে সকল স্থানে প্রতিস্টা করতে হবে, বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন কায়েম করে এগিয়ে যেতে হবে । এই অবস্থা অবলোকন করে সমস্ত বুর্জোয়া গণমাধ্যম জি এন সি র কার্যক্রমকে একটি “অপরাধ মূলক” কাজ বলে প্রচার করতে শুরু করে, তাঁরা বলতে থাকে এই কার্যক্রমের ফলে সমস্ত দেশে উৎপাদন মারত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই সকল শিল্প কারখানার মালিকেরা পার্লামেন্টের নিকট এই মর্মে লিখিত দাবী করল যে, তাঁরা যেন শ্রমিকদের এই ধরনের কাজের বিরুদ্বে আইন প্রনয়ন করে, শ্রমিকদের চলমান কার্যক্রমকে বেয়াইনী ঘোষণা করে দেয়। অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকদেরকে ব্যাক্তিগত ভাবে ডেকে নিয়ে তাদেরকে ইউনিয়নের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলে, নইলে তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করা সহ কারখানা বন্দ্বকরে তাদেরকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলার হুমকী দমকী দিতে থাকে ।

পার্লামেন্ট তখন কিন্তু মালিক পক্ষের কথা শোনে নাই, তাঁরা সমন্বয় আইন পুনস্থাপনের জোরদেয়, কিন্তু সরকার বিচারকদের কে শ্রমিকদের বিরুদ্বে আইনের আওতায় সকল প্রকার কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। বিচার বিভাগ সেই রকম ব্যবস্থা নিতে থাকে, তাই অনেক শ্রমিককে আত্মগোপন করে কাজ চালাতে হয়। কিন্ত সেই সমন্নয় আইনের আওতায় বহু শ্রমিককে গ্রেফতার করে বিচারে সম্মোখিন করা হয় । আইনের শাসনের নামে হাজার হাজার শ্রমিককে ছোট ছোট অপরাধের জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা ঘোষনা করে আদালত সমূহ। নিরিহ শ্রমিকদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়ে তাঁদের উপর অসংখ্য কল্পকাহিনী তৈরী করে শাস্তি দিয়ে মালিক ও সরকার পক্ষ তাঁদের মনের জ্বাল মিটাতে থাকে। জে এন সি র গৃহিত উদ্যোগে অনুপ্রানীত হয়ে ডোরচেস্টার গ্রামের একজন মাঠ পর্যায়ের শ্রমিক একটি সংগঠন করেন তার নাম টুলপডলে। তিনি তাঁদের সাথীদের নিয়ে সাপ্তাহে তাঁদের বেতন সাত সিলিং থেকে বাড়িয়ে আট সিলিং মজুরী বৃদ্বি করার জন্য দাবী করে। দাবী উত্থাপন কারীদেরকে তাৎক্ষনিক ভাবে গ্রেফতার করে ভয়ঙ্কর শাস্তি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কোলোনীতে সাত বছরের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাঁদের একমাত্র অপরাধ হলো তাঁরা ইউনিয়নের সদস্য।

জি এন সি প্রথম থেকেই দির্ঘকাল মজুরী বৃদ্বির লড়াই সংগ্রাম চালিয়েছে, এবং ক্রমাগত ভাবে নানা প্রকার বিচার আচারের সম্মোখিন হয়েছে। এই ভাবেই তারা নানা প্রকার চড়াই উৎরাই পার হবার মধ্য দিয়ে জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছে। হয়ত এমন অনেক কাজ করতে হয়েছে যা সেই সময়ের জন্য উপযুক্ত ছিলো না । কোন কোন শ্রমিক সচেতন ভাবেই এসেছে, কেহ কেহ তার তাৎক্ষনিক চাহিদা মেটাতে এসেছে, এঁদের অনেকে ধর্মঘটের পক্ষে খোলাখোলী ভাবে প্রচারনায় অংশ নিয়েছেন । ফলে ১৮৪২ সালে ল্যাংকশায়ার, ইয়র্কশায়ার, স্টেফোর্ডশায়ার, পার্থ এবং স্কটল্যান্ড জেলার ওয়েলসের কয়লা খনিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সত্যিকার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, কেন না সেই সময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ওয়েনের প্রভাবে চার্টিস্টবাদের দিকে ঝুকে পড়ে, কারন তাঁদের মধ্যে সত্যিকার অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো না । তাঁরা আমূল পরিবর্তনের পরিবর্তে সংস্কারের দিকে বেশী মননিবেশ করে। ১৮৪৮-৪৯ সালের অস্থির বিপ্লব চার্টিস্ট আন্দোলনে রূপ নেয়। এবং মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়নিজম ইংলিশ শ্রমিক আন্দোলনের কবলে চলে যায়, ছিলো সত্যিকে মুক্তিপরায়নতার বিপরীত ধারা ।

ফ্রান্সে সমাজবাদিদের সাথে শ্রমিক আন্দোলনের একটা জোটবদ্বতা ছিলো, তাঁদের একটা লক্ষ্য স্থির ছিলো যে অবশ্যই পুঁজিবাদকে বিতাড়িত করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে একটি নয়া সমাজ ব্যবস্থা । শ্রমিকশ্রেনী ও বুর্জোয়াদের মধ্যে একটি প্রচণ্ড বিরুধ বিদ্যমান, তাই তাঁরা চাইছিল একটি বিপ্লবের মাধ্যমের এর ফয়সালা করতে। বিপ্লবের পূর্বে তথাকথিত কম্পাগঞ্জোনাগেজ এর প্রচারনায় ঐক্যবদ্ব হয়, যাদের সম্পর্কে পনর শত শতকের দিকে কিছু তথ্য জানা যায় । এটা ছিলো অনেকটা দিনমজুর ও কুটির শিল্পীদের একটি সংস্থা বা সমিতি। তাঁরা সেই সমিতি গড়ে তুলেন নিজেদের দাবী দাওয়া আদায় ও সমসাময়িক সমস্যা সমূহের চাহিদা পুরনের জন্য, তাঁরা হরতাল ধর্মঘট করত তাৎক্ষনিক আর্থিক ইস্যুতে। জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ, বড় শিল্পের বিকাশের জন্য তাঁদের তেমন আগ্রহ ছিলো না, অনেক ক্ষেত্রে সেই সময়ে তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক গুরুত্ব কমে যাচ্ছিলো । তখন নয়া ধরনের প্রলেতারিয়েতের উত্থান পর্ব চলছিলো ফ্রান্সে।
১৭৯০ সালের, ২১শে আগস্টে পাশ করা আইন জন সাধারন প্রচলিত আইনের মত করেই মেনে নিয়েছিলো, সেই আইনের আওতায় শ্রমিক শ্রেনীর মানুষেরা ও নিয়োগ কর্তাদের নিকট থেকে নিজেদের স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন বলে মনে করতেন। তবে সেই সময়ে অনেক স্থানীয় ধর্মঘট হয়, বিশেষ করে বিল্ডিং শিল্পের মধ্যে। নিয়োগ কর্তাগন অনেক ক্ষেত্রে চিন্তিত হয়ে পড়েন, চারিদিকে তখন শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠে, কেবল প্যারিসেই ৮০,০০০ শ্রমিক সদস্য সমিতি ভুক্ত হন ।

সরকার একটি পরিপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ কর্তাদের নিপীড়ন মূলক কাজের নিন্দা করে, নিয়োগ কৃত শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলে, এবং নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকদের মধ্য মুক্ত স্বাধীন চুক্তি করার পরামর্শ প্রদান করে। সরকার অত্যন্ত সদয়ভাবে পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে, এবং শ্রমিকদের জন্য কর্মের একটি সন্দর পরিবেশ বজায় রাখার আহবান জানায়, যেকোন ধরনের ক্ষতিকর কর্মকে নিষিদ্ব করে দেয়, কারন সরকারের দৃষ্টি এই ধরনে অবস্থা চলতে দেয়ার অর্থ হলো একটি সরকারের ভেতর আরো একটি সরকাকে চলতে দেয়া । ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত এই ধরনের সরকারী আদেশ চালু ছিলো। সেই সময় অনুভূত হচ্ছিলো যে পরিস্থিতি যেন আইনের চেয়ে ও অধিকতর শক্তি শালী। ইংরেজ শ্রমিকদের মত ফ্রান্সের শ্রমিকদের মাঝে ও গোপন সংগঠন গড়ে উঠে, কেননা তখন প্রচলিত আইন শ্রমিকদের দাবী দাওয়া সমূহ প্রকাশ্যে আমলে নেবার মত অবস্থা ছিলো না । বরং প্রকাশ্যেই শ্রমিকদের দাবীকে অবজ্ঞা করে অস্বীকার করত।

তথাকথিত মিউচুয়ালিটি ছিলো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সামাজিক মিউচুয়ালিটি, যা প্রায়স প্রকাশ্য কাজ করে যেত, এটা সামাজিক ভাবে একটি আইনী বাতাবরন প্রদান করত, এবং গোপন শ্রমিকদের প্রতিরোধ সংগঠন সমূহের বৈধতা দান করত। এটা সত্য যে তাঁরা নানা ভাবে মামলা মোকদ্দমা মোকাবিলা করত, এবং বিভিন্ন ভাবে ত্যাগ ও স্বীকার করতে হত, তবে কোন আইনই তাদেরকে নির্মূল করে দেবার মত শক্তি ছিলো না । তাঁদের প্রতিরোধ অব্যাহত ছিলো। লুই ফিলিফের অধীনে শ্রমিকদের আইন আরো শক্ত ও কঠিন হয়ে উঠে, কিন্তু প্রতিরোধ সংঠনের কার্যক্রম থামে নাই বরং দিনে দিনে বাড়তেই থাকে, এমনকি গোপনে বড় ধরনের ধর্মঘট পালনের মত কার্যক্রম ব্যাপক ভেবে এগিয়ে চলছিলো। লিয়নসের যুদ্বের মত একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ১৮৩১ সালে ইউরূপে ব্যাপক নাড়া দেয়। শ্রমজীবী শ্রমিক শ্রেনীর লোকেরা নিয়োগ কর্তাদের নিপীড়ন থেকে বেপরোয়া ভাবে বেড়িয়ে আসে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর লোকেরা বাঁধা প্রদান করলে ও সেই দ্রুহকে থামানো যায়নি । শ্রমিকগন সাহসের সাথে অত্যন্ত দৃড়ভাবে নিজেদের ব্যানার বহন করে দ্রুত এগিয়ে যায়, তাতে লিখা হয়ঃ “লড়াই করে মর বা কাজ করে বাঁচ!”

Comments

Related content