বৈশ্বিক উষ্ণতা ১০০ মিলিয়ন মানুষকে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

Submitted by akmshihab on February 23, 2019

বৈশ্বিক উষ্ণতা ১০০ মিলিয়ন মানুষকে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ একটা বিপদ ধেয়ে আসছেঃ পরিবেশগত পরিবর্তন দারিদ্রতাকে তিব্রতর করবে”, বলা হয়েছে দুনিয়ার জলবায়ুর পরিবর্তন ১০০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দিবে। আগামী মাত্র দেড় দশকে এই অবস্থার সৃষ্টি হবে। এই অবস্থার সৃষ্টি হলে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষের আয়ের পরিমান দৈনিক মাত্র ১.৯০ ডলারে নেমে আসবে। এই নিম্ন আয়ের মানুষের সাথে আরো যুক্ত হবে চলমান প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ যাদের দৈনিক আয় মাত্র ১.৯০ ডলার। যাদেরকে বিশ্ব ব্যাংক “ চরম দরিদ্র” বলেছে।

দরিদ্র দেশের লোকেরাই বেশী ঝুকিতে আছেন, বিশেষ করে সাব সাহারান আফ্রিকা ও এশিয়ার মানুষেরা। প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বের দরিদ্র এলাকার মানুষের কৃষি ও স্বাস্থ্যের বিপুল ক্ষতি করবে। ফসলের উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৫% কমে যাবে। দরিদ্র লোকেদের খাদ্য কেনার মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। বন্যার মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ আরো ব্যাপকতা লাভ করবে। দুনিয়ার দরিদ্র দেশ সমূহে ব্যাপক হারে রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটবে।

বিশ্বের জল বায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। উদাহরন হিসাবে বাংলাদেশের কথা বলা যায়। এই দেশটি ক্ষতি গ্রস্থ দেশ সমূহের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ৫০০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ যারা দরিদ্র দেশ সমূহে বসবাস করেন তারা কোন না কোন ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ্ হবেন। সমূদ্র পাড়ে অবস্থিত দেশ যেমন বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল পানির নিচে চলে যাবে এবং সাইক্লোন ও প্রাকৃতিক ঝড়ের কবলে নিপতিত হবে। ধারনা করা হচ্ছে যে, ২০২০ সালের মধ্যে বৃস্টি নির্ভর কৃষি ৫০% কমে যাবে। ২০২০ সালের মধ্যে দক্ষিন এশিয়ায় প্রায় ১০% ধান ও ভুট্রা উৎপাদন কমে যাবে। পাকিস্তানে ও ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ % খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে। খাদ্যের সংকট দক্ষিন এশিয়ার দেশ সমূহকে মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত করবে।

বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন, বিশেষ করে বিশ্বের উষ্ণায়ন, পুঁজিবাদী প্রতিস্টান বিশ্ব ব্যাংক সহ সকলকেই নাড়া দিয়েছে। বিশ্বের জল বায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে কেহই রেহাই পাবে না – এমন কি পুঁজিবাদ ও তা উপেক্ষা করতে পারছে না । তবে, এই ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদের দালালরা ও পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তাই দুনিয়ার কাঠামোগত বিপ্লবী পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পন্য উৎপাদনের যে প্রক্রিয়া তাতে দরিদ্র দেশ গুলি ব্যাপক হারে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। গরীব দেশের লোকেরা যা উৎপাদন করে তা তারা উপভোগ করতে পারেন না । তা চলে যায় প্রথম বিশ্বে। এছাড়া এই সকল উৎপাদনকারীগন উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও পায় না । দরিদ্র দেশের পরিবেশ, পানি, মাটি ও বায়ু মারাত্মক ভাবে দুষিত হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। আধুনিকতার নামে প্রথম বিশ্বের ধনী দেশ সমূহ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। আর ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে দরিদ্র দেশের লোকেরা। পক্ষান্তরে, ধনীদেশের মানুষেরা সুখী ও শান্তিময় জীবন যাপন করছে।

লক্ষ্যনীয় যে, সম্প্রতি প্রতিটি দেশের নির্বাচনী প্রচারনায় বৈশ্বিক পরিবর্তনের বিষয়টি স্থান পাচ্ছে। বিশ্ব শ্রেনী বিশ্লেষণে ও তা বিবেচিত হচ্ছে । দিরিদ্র দেশ তথা এশিয়া , আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, সহ সকল গরীব দেশ এখন “মারাত্মক বিপর্যয়ের” মূখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিটি প্রতিস্টান এই বিষয়ে নিজেদের উদ্যেগ প্রকাশ করে কথা বলছেন। তারা বলছেন, দুনিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমেরিকা সবচেয়ে বেশী দায়ী।

কমিউনিস্ট ইশতেহারে, কার্ল মার্ক্স বলেছিলেনঃ

“ দুনিয়ার ইতিহাস মানেই হলো শ্রেনী সংগ্রামের ইতিহাস। স্বাধিন মানুষ বনাম দাস, প্যাট্রেশিয়ান বনাম প্লেবিয়ান, লর্ড ও রায়ত, গিল্ড ও তাদের অধীনস্থরা, এক কথায় বলতে হয় নিপিড়িত বনাম নিপিড়ক শ্রেনী, সকল সময়ে এরা পরস্পরের বিরুদ্বে দাঁড়িয়েছে, তা ছিলো বিরতীহিন, কখন ও অপ্রকাশ্য, আবার কখনো প্রকাশ্য লড়াই হয়েছে, সেই লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাজে বিপ্লবী পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে এক শ্রেনী – অন্য শ্রেনীকে নিমূল করে দিয়েছে”।

তবে আমরা প্রায়স একটা কথা ভূলে যাই যে, মার্ক্স তার জীবন কালে কোন বিপ্লব দেখে যেতে পারেন নাই। এখানে অন্য একটি দিক ও আছেঃ তা হলো আমরা সকলেই ধ্বংসের দিকে যেতে পারি। এখন কার বাস্তবতা হলো দুনিয়ার মানুষ আজ সে পরিস্থিতিই মোকাবেলা করছে। বিশ্ব পুঁজিবাদ সারা বিশ্বকেই, আমাদের সকলের আবাসস্থলকেই ঝুকিতে ঠেলে দিচ্ছে। প্রথম বিশ্বের ভোগবাদি কার্যক্রম আমাদের পরিবেশকে ব্যাপক হারে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বেশীর ভাগ মানুষ, বিশ্ব গরীব সমাজ ও প্রলেতারিয়েত শ্রেনী নিদারুন কষ্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্বল্প সংখ্যক ধনী মানুষ সারা দুনিয়ার বেশীর ভাগ সম্পদের মালিক হয়ে তা উপভোগ ও অপচয় করছে। যদি এই পরিস্থিতিকে আমরা উপেক্ষা করি তবে তা আমাদের সকলের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনবে। আমাদের ও আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য তা হবে মারাত্মক বিপর্যয়। আমাদের অবশ্যই জেগে উঠতে হবে। আমারাই তো সংখ্যায় বেশী। আমরাই কেবল পারি কিছু মানুষের পাগলামী বন্দ্ব করতে। সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে। এখনই সময় দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদের পতাকা উর্ধে তোলে ধারার। আমরা কি সকলেই মরে যাব নাকি বিপ্লব করে সকলেই বেঁচে থাকব ?

please read more: www.bangladeshasf.org

Comments