গ্রন্থঃ এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ

কার্ল মার্ক্স একটি নয়া ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন, তিনি প্রলেতারিয়েতদের একনাকত্বের ধারানার প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন, তিনি বলেছিলেন, একটি শ্রেনীহীন সমাজ বিনির্মানের জন্য এটা হবে একটি অন্তর্বতীকালিন ব্যবস্থা। তিনি আরো প্রস্তাব করেন, শ্রেনীর দ্বন্দ্ব, শ্রেনী স্বার্থ যখন থাকবে না তখন রাষ্ট্র আপনা আপনিই বিলয় হয়ে যাবে। এই ধরনের ধারনা সামগ্রীক ভাবে ছিলো ভূলে ভরা, ঐতিহাসিক ভাবে রাষ্ট্রের যে ধর্ম, ধরন বা প্রকৃতি যেখানে সর্বদা বিরাজ করে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা।

Submitted by akmshihab on May 12, 2018

গ্রন্থঃ এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ

মুল লিখকঃ রুডলফ রকার, অনুবাদঃ এ কে এম শিহাব

এনার্কিজম বা নিরাজবাদঃ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, (তৃতীয় কিস্তি)

এনার্কিজম বা নিরাজবাদ সাধারন ভাবে সকলের জন্য মুক্তি চায়, সকল ব্যাক্তি মানুষের জন্য প্রগতি ও সুখ কামনা করে এবং সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করতে বদ্বপরিকর। স্বাধীন মুক্ত চিন্তার প্রতিফলন সকল স্তরে প্রাসারিত করতে কাজ করে, এটা সরকারি হস্তক্ষেপ তিরোহিত করে দিবে। এই মতবাদের অনুসারীগন সামগ্রীকভাবে যৌক্তিক পরিনতির মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক প্রতিস্টান সমূহের বিলয় ঘটিয়ে একটি জীবন্ত সমাজ কায়েম করবে। যখন জেফার্সন মুক্তিবাদের জন্য কথা বলতে শুরু করেন এই ভাবে, “ সেই সরকারই উত্তম যে সরকার কম হস্তক্ষেপ করে”, আর এর্নাকিস্ট তোরে বলেন, “ এই সরকারই উত্তম, যে সরকার কোন ভূমিকাই রাখেন না, এমানকি সমাজবাদ কায়েমকারীগন ও নয়, নিরাজবাদিদের দাবী হলো তিরীহিত কর অর্থনৈতিক একচাটিয়াবাদ, কায়েম কর ভূমি ও কারখানায় সাধারন জনগণের মালিকানা। যা সকল মানুষের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবেঃ সকল মানুষের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সাম্য নিশ্চিত করবে, এনার্কিস্টদের সমাজবাদি আন্দোলন চায় পুঁজিবাদের উচ্ছেদ করতে এবং সকল যুদ্বের অবসান করতে । রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিস্টানের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, অর্থনৈতিক শোষণ এবং হাতে হাত ধরে চলেছে সামাজিক ও রাজনৈতিক নিপীড়ন। মানুষ মানুষকে শোষন করছে, মানুষ মানুষের উপর প্রভু হয়ে বসেছে, এই চিত্র চলে এসেছে দির্ঘ কাল ধরে।

যতদিন সমাজে প্রভূত্ব বিস্তারকারী শ্রেনী বা যারা তেমন প্রভাবশালী নন এমন লোকদের মাঝে একটা বিরুধীয় বা দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। যখন একটি রাষ্ট্রে কতিপয় লোক বা একটি স্বল্প জনগৌস্টির লোক অন্যদের উপর সুযোগ নেবার তালে থাকে। ততক্ষন এক পক্ষ অন্য নিরিহ পক্ষকে শোষন করবেই। তাই এই ধরনের পরিবেশ সমাজ থেকে বিতারন করতে হবে, তখন কারো আলাদা কোন সুযোগ সুবিধা থাকবে না, মানুষের উপর প্রশাসনের ও খবরদারী করার দরকার নেই, সেই প্রসঙ্গে সাধক সিমন বলেছিলেন, “ একদিন এমন এক সময় আসবে যখন সরকার বলে কোন বস্তু থাকবে না, একটি নয়া ব্যবস্থা তাঁর জায়গা দখল করবে, সেই ব্যবস্থার দ্বারাই সকল কিছু পরিচালিত হবে”।

সেই ধারনার মতই কার্ল মার্ক্স একটি নয়া ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন, তিনি প্রলেতারিয়েতদের একনাকত্বের ধারানার প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন, তিনি বলেছিলেন, একটি শ্রেনীহীন সমাজ বিনির্মানের জন্য এটা হবে একটি অন্তর্বতীকালিন ব্যবস্থা। তিনি আরো প্রস্তাব করেন, শ্রেনীর দ্বন্দ্ব, শ্রেনী স্বার্থ যখন থাকবে না তখন রাষ্ট্র আপনা আপনিই বিলয় হয়ে যাবে। এই ধরনের ধারনা সামগ্রীক ভাবে ছিলো ভূলে ভরা, ঐতিহাসিক ভাবে রাষ্ট্রের যে ধর্ম, ধরন বা প্রকৃতি যেখানে সর্বদা বিরাজ করে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা। তথাকথিত অর্থনৈতিক বস্তুবাদের যৌক্তি দিয়ে বলা হয়েছিলো উৎপাদন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি সমাজের “ রাজনৈতিক ও বিচারিক উপরি কাঠামো” গড়ে উঠে, “অর্থনৈতিক কাঠামোর” উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সামাজিক সৌধ। একটি ঐতিহাসিক তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে এইরূপ ভাবনার জন্ম হয়। বাস্তবতা হলো, ইতিহাসের নানা বাঁকে আমরা দেখতে পাই নানা সময়ে অর্থনৈতিক পঠ পরিবর্তন হয়েছে, কখনো এগিয়েছে আবার পিছিয়ে , কিন্তু রাজনৈতিক ধরন প্রকৃতির তেমন কোন উল্লেখ যোগ্য পরিবর্তনই ঘটে নাই।

আমরা স্পেনের দিকে যদি দৃষ্টি দেই তবে দেখব যে, সেখানে যখন রাজতন্ত্র অনেক শক্তিশালী অবস্থায় বিরাজমান ছিল তখন ও সেখানে অর্থনীতির বিশাল অংশ দখল করে ছিলো শিল্পের প্রধান্য। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতি বিরাজ করছিলো। এমন কি ইউরূপের প্রতিটি দেশের তুলনায় এরাই ছিলো অগ্রগামী। কিন্তু রাজতন্ত্র যখন তাঁর হস্তক্ষেপ করা বাড়িয়ে দেয় তখনই শিল্পে ধ্বংস নেমে আসে। শিল্প গুলো ঘুড়িয়ে দেয়া হয় এমন কি আদি যুগের দিকে ফিরে যেতে থাকে। কৃষি বিনষ্ট হয়ে গেল, উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেল। পানির জন্য তৈরী করা খাল, নালা, বন্দ্ব করে দেয়া হলো, কৃষি ভূমি পরিণত হল মরুভূমিতে। সেই যে স্পেনের পিছিয়ে পড়া যা আজো পুরন করতে পারে নাই। একটি সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য একটি বিশাল জাতি শত শত বছর ধরে অর্থনৈতিক অভিশাপের শিকার হয়।
ইউরূপের একনায়কত্বের স্বৈরতান্ত্রিকতা, “ অর্থনৈতিক নীতিমালা” এবং “ শিল্প আইনঃ” যা দাসত্বের জন্য শাস্তির বিধান রাখলে ও উৎপাদন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে আবার আগ্রসনকে ও প্রশ্রয় দেয়া হয়, সেই জঠিল বিধি বিধান দির্ঘকাল ইউরূপের শিল্প উন্নয়নকে বাঁধা গ্রস্থ করে দেয়, এটা সকল কিছুর স্বাভাবিক বিকাশকে থামিয়ে রেখেছিলো। সেখানে রাজনৈতিক শক্তির কোন প্রকার তোয়াক্কাই করা হয়নি, তা বিশ্ব যুদ্বের পর যখন সামগ্রীক ভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছিল তখনো রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত্বদেরকে সুরক্ষা দেয়া হয়। তারাই ফ্যাসিবাদি চক্রকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে তাঁদের কু কর্মের রাস্তা প্রসারিত করে দেয়। আধুনিক অর্থনীতি যে ধরনের রাজনীতি প্রত্যাশা করে তা সেখানে ছিটেফোঁটা ও দেখা গেল না ।
রাশিয়াতে তথাকথিত “প্রলেতারিয়েত একনায়কত্বের” নামে বাস্তবতাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে একটি দলীয় একনায়কত্ব কায়েম করা হয়, যেখানে কোন প্রাকার সামাজিক শক্তির উন্মেষ ঘটতে দেয়া হয়নি, যারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের বা পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে পারত। অথচ উন্নয়নের নামে পুরোজাতির শ্রমজীবী মানুষকে এক প্রকার কারাগারে নিক্ষেপ করে দাসে পরিণত করে দিয়ে নোংরা রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদ কায়েম করে ফেলে। সেই “প্রলেতারিয়েত একনায়কত্ব” জাতির সামগ্রীক অবস্থাকে নড়বরে করে দেয়, ফলে সতিকার সমাজবাদ কায়েম করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।বরং ক্রমে সেখানে এক বীভৎস স্বৈরাচার কায়েম হয়, ফলে রাশিয়া একটি ফ্যাসিবাদি দেশ ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনি।

বলা হয়ে থাকে যে, রাষ্ট্রের উচিৎ হলো শ্রেনী সংগ্রামকে চালু রাখা, যত দিন শ্রেনীর অবসান না হবে। নির্মূল না হবে শ্রেনী ভাবনার। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা বলে, আসলেই এই সকল কথা হলো এক প্রকার বাজে কৌতুক। প্রতিটি রাজনৈতিক শক্তিই হলো এক প্রকার দাস তৈরীর কারখানা, রাষ্ট্রের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য তাদেরকে কাজে লাগানোর কথা বলা হয়। বাহ্যিক ভাবে বলা হয়, একটি রাষ্ট্র আরেকটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের জন্য কৃত্রিম বিরোধের সূত্রপাত করে থাকে, যা মূলত নিজেদের স্বার্থকে উর্ধে তুলার জন্য বা অস্থিত্ব প্রমান করার জন্য। অথচ স্ব স্ব দেশে নানা প্রকারের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক শ্রেনী বিদ্যমান রয়েছে। রাষ্ট্র এক দিকে নাগরিকদের অধিকার রক্ষার কথা বলে আবার অন্য দিকে অধিকার কেড়ে নেবার আয়োজন করে; এটা করতে করতেই রাষ্ট্র ক্লান্ত হয়ে পড়ে ।

একটি বড় রাষ্ট্র যখন বিপ্লবের মধ্যদিয়ে সরকার বদল হয় বা অস্থিত্ব লাভ করে তখনই তাঁর পুরতান সুবিধা ভোগী শ্রেনী তাঁদের নিজেদের আখের গুছিয়ে নেবার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়, এরা নিজের প্রভূত্ব বজায় রাখার জন্য নানা কৌশল অবলম্ভন করে । আমরা রাশিয়ার ক্ষেত্রে ও তাই দেখতে পাই, বলসেভিক দের উত্থানের পর একটি ক্ষদ্র শাসক চক্র প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বের নামে ক্ষমতায় অধিস্টিত হয়, তাঁরা সমগ্র রাশিয়ার জনগণের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করে বসে, সেখানে আগের মতই ভিন্নমাত্রার এক প্রভুত্বের রাজত্ব চলতে থাকে। এই নয়া শাসক শ্রেনী, অল্প সময়ের মধ্যেই এক আভিজাত্যের রূপ ধারন করতে থাকে। তাঁরা নিজেদেরকে শ্রমিক শ্রেনী থেকে পৃথক করে সুবিধা ভূগী শ্রেনীতে পরিণত হয়। সাধারন মানুষের সাথে এঁদের কোন সম্পর্কই আর থাকে না ।

এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, রাশিয়ার কমিশারতন্ত্র এবং তাঁদের গৌস্টির লোকেরা অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশের শিল্প কারখানের মালিকদের চেয়ে কোন ভাবেই পিছিয়ে ছিলো না । এই প্রসঙ্গে কোন প্রকার সমালোচনা বা আপত্তি গ্রহণযোগ্য ছিলো না । তাঁদের অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহনের মাত্রা যতই বাড়তে থাকে তাঁদের অধীন সাধারন জনগণের জীবন যাত্রার মান ততই কমতে থাকে । প্রভাব ফেলতে থাকে তাঁদের দৈনিন্দিন জীবনে। আমেরিকার একজন সাধারন শ্রমিক, ভালোভাবে কাজ করলে এবং যথাযথ নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করলে খাদ্য, কাপড়, গৃহ সহ মানবিক জীবন ধারন করতে কোন অসুবিধা হয় না । কিন্তু তাঁদের পক্ষে মিলিয়নার হওয়া বেশ কঠিন বিষয়। এমন কি যারা ছোট খাট আমলা তাঁদের পক্ষে ও তা সম্ভব হয় না । এমন কি লোকেরা স্বচ্ছল জীবন হারানোর ভয়ে থাকে, বসবাসের জন্য অচেনা লোকের সাথে গৃহ বেচে নিতে হয়, যারা অধিক উন্নত উৎপাদন কর্মে নিয়োজিত তাঁদের ক্ষমতা হয়ত কিছু বেশী। কিন্তু উঁচু শ্রেনীর যারা লোকদের তাঁদের তুলনায় এঁদের কিছুই নেই। একেই অবস্থা তখন রাশিয়ায় ও চলছিলো পুঁজিবাদী দেশের অবস্থা আর তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্যই ছিলো না । বরং পুঁজিবাদী দেশের জনগণ প্রতিবাদ ও সমালোচনা করতে পারত আর রাশিয়ায় ধনীক শ্রেনীর বিরুদ্বে কথা বলা মানেই ছিল জীবনের ঝুকি নেয়া ।

তবে তুলনা মূলক ভাবে রাশিয়ার অর্থনৈতিক জীবনে গুনমান অনেক উন্নত ছিলো, কিন্তু রাজনৈতিক নিপিড়নের মাত্রা ছিলো মারাত্মক। অর্থনৈতিক সাম্য কোন ভাবেই রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অস্বীকার করতে পারেনা । এই জিনিষটা মার্ক্সবাদি ও অন্যান্য কর্তৃত্ববাদি সমাজবাদিরা কোন ভাবেই বুঝতে চায়নি। এমন কি জেল খানা, সেনা ব্যারাক, বা লঙ্গর খানায় একেই রকমের খাদ্য, পোষাক, একেই রকমের থাকার জায়গা, এমন কি প্রায় একেই রকমের কাজ কর্ম দেয়া হয় । কিন্ত তা মানুষ স্বাভাবিক ভাবে নেয় না । প্রাচীন পেরুর ইনকা জাতি, এবং প্যারাগোয়ের জেসুইট জাতির মধ্যে ও অর্থনৈতিক সাম্য ছিলো। কিন্তু তাঁদের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীকার ছিলো না ফলে জনগণ সেই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট ছিলো না । কেননা সমাজ ও রাষ্ট্র চালনা তাই জনতার বিদ্রোহ দেখা দেয় বার বার। চিন্তক প্রুদু বলেছেন বলেই নয় যে, স্বাধীনতাহীন “সমাজবাদ” দাসত্বের চেয়ে ও ক্ষতিকর একটি মতবাদ। তাই সাধারন মানুষের আকাঙ্ক্ষা হলো সামাজিক ন্যায় বিচার কার্যকরী করতে হবে, তার মাধ্যমে অবশ্যই মানুষের স্বাধীকার নিশ্চিত করতে হবে । সমাজবাদ হবে অবশ্যই স্বাধীন পরিবেশে, নইলে তা সমাজবাদই নয়। কোন মিথ্যাকে প্রতিস্টা করার জন্য অন্য আরো কোন গভীর মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করা অপরাধ। নিরাজবাদই কেবল মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে । উপহার দিতে পারে স্বাধীন ও সাম্যের সমাজ বিধান।

সামাজিক প্রতিস্টান সমূহ এমন ভাবে কাজ করে, যেমন এটি একটি মানব দেহে নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে থাকে; সেই প্রতিস্টান গুলো হল সামাজের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অঙ্গ গুলো কোন পারস্পরিক আপোষ রফার মাধ্যমে তৈরী করা হয় না, বরং শরীরের অতি প্রয়োজনেই সেই গুলো তৈরি ও কাজ করে চলে। গভীর সমূদ্রের মাছ সমূহের চোখ বিশেষ ধরনের হয়ে থাকে। যা প্রচলিত সাধারন ভাবে বসবাসকারী প্রানীদের মত নয়, এর ও কারন হলো প্রানী সমূহের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারার জন্যই এমন হয়ে থাকে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে গাছ ও প্রানীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পরিবর্তিত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিটি অঙ্গই স্ব স্ব কাজ চাহিদা অনুসারে করে থাকে। যদি পরিবেশ পাল্টায় তবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও পালটায়, এমন কি অনেক সময় অনেক অঙ্গ বিলুপ্ত ও হয়ে যায়। কিন্তু কোন অঙ্গ অদরকারী অবস্থায় ঠিকে থাকার বা কাজ করার চেষ্টা করে না । সামাজিক অনেক প্রতিস্টানের ক্ষেত্রে ও একেই কথা প্রযোজ্য। সেই প্রতিস্টান গুলো ও ঠিকে থাকতে চায় না, তবে তাদেরকে ঠিকিয়ে রাখায় প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিটি সামাজিক চাহিদারই একটি লক্ষ্য থাকে। এই ভাবেই আজ আধুনিক রাষ্ট্র সমূহ অর্থনৈতিক একচাটিয়া বাদের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এর সাথে আছে সামাজিক শ্রেনী বিভাগ। এই সবের সাথে আছে সামাজিক নানা প্রকার রচম রেওয়াজ ও রীতিনীতি। সমাজে মালিকানার বিকাশ হয়েছে, তাকে সুরক্ষা দিয়ে তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার, সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা ভীত নির্মান করা হয়েছে। এই ভাবেই নানা প্রকার বিবর্তনের ভেতর দিয়ে আজ আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলা হয়েছে। এইটা আসলে রাজনৈতিক কর্ম কান্ডের একটি বিশেষ অঙ্গ। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চা করা সহজ । এই কাঠামোর ভেতর দিয়ে মালিকানার অধীকারী লোকেরা নিজেদের মালিকানা সুরক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এই ধরনের কাজ গুলো রাজনৈতিক রাষ্ট্র সমূহের আসল কাজ। এই কাজের জন্যই আদতে রাষ্ট্র ঠিকে আছে। এই ধরনের কাজের জন্যই রাষ্ট্র নিজেদেরকে বিশ্বস্থ প্রমান করেছে, নইলে এইই রাষ্ট্র যন্ত্র ঠিকতে পারত না । পারবে না ।

Comments

Related content