ক্রপতকিন দেখিয়ে দেন যে, প্রকৃতির জগতে যেমন একটি অনিশ্চিত লড়াই সংগ্রাম চলে, বাস্তবের জগতেও সেই সংগ্রামই অব্যাহত আছে, সেখানেও চলছে ঠিকে থাকার এক প্রকারের নির্দয়, নিস্টুর সংগ্রাম। সেই লড়াই ও মরন পন লড়াই, সেখানে ও প্রকৃতিক বিধানের ন্যায় চলছে দূর্বলের উপর সবলের প্রধান্য বজায় রাখার এক নিরন্থর যুদ্ব। সামাজিক বিবর্তন এবং সামাজিক সম্মিলিত সহায়তার মাধ্যমেই মানব সমাজ এখনো ঠিকে আছে।
গ্রন্থঃ এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ
মুল লিখকঃ রুডলফ রকার, অনুবাদঃ এ কে এম শিহাব
এনার্কিজম বা নিরাজবাদঃ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, (দ্বিতীয় কিস্তি)
এনার্কিজম বা নিরাজবাদ মাইকেল বাকুনিনের বিপ্লবী চিন্তা চেতনা ও উদ্যোগ থেকে এগিয়ে যাবার প্রেরনা পায়, তিনি প্রুদুর নিকট থেকে যে শিক্ষা পেয়েছিলেন তা ছিল তাঁর কাজের ভিত্তি, তিনি তা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্প্রসারিত করেন, প্রথম আন্তর্জাতিকের মধ্যে যারা যৌথতাবাদি ছিলেন তাঁরা ও তাঁর সাথে যুক্ত হন, তাঁদের বক্তব্য ছিলো, ভূমি সহ সকল উৎপাদন উপায়ের উপর সামস্টিক মালিকানা কড়াকড়ি ভাবে কায়েমের জন্য জোর দিতে হবে, অন্যদিকে ব্যাক্তি মালিকানা সীমীত করে দিয়ে নিজের শ্রমের ফল নিজেই যেন ভোগ করতে পারে তাঁর ব্যবস্থা করতে হবে। বাকুনিন কমিউনিজমের বিরুদ্বে অবস্থান নেন, সেই সময়ে কমিউনিজম মানেই ছিলো প্রচন্ড কর্তৃত্ববাদি ব্যবস্থার নাম, যা পরবর্তীতে বলশেভিকবাদ রূপে রাশিয়া সহ নানা দেশে প্রকাশিত হয়। মাইকেল বাকুনিন বার্নে ১৯৬৮ সালে অনুস্টিত শান্তি ও স্বাধীনতা নামক বক্তব্যে বলেন, “ আমি কমিউনিস্ট নই, কারন কমিউনিজম সকল সামাজিক শক্তিকে রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে চাইছে; এই প্রক্রিয়া রাষ্ট্রের নিকট সকল সম্পদ পুঞ্জীভূত করে দিবে, আমি চাই সকল রাষ্ট্রের বিলয়, সকল কর্তৃত্ববাদের অবসান, সরকারের মাতুব্বরী বন্দ্ব করতে- এই সব মানুষের নৈতিক শক্তি ও সভ্যতাকে বিনাশ করছে এবং সকলকে দাসত্বে, নিপিড়নে, ও শোষোনের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিচ্ছে”।
বাকুনিন একজন সত্যিকার বিপ্লবী চিন্তার মানুষ ছিলেন, তিনি চলমান শ্রেনী দ্বন্দ্বের কোন প্রকার শান্তিপূর্ন সহ অবস্থানে বিশ্বাসী ছিলেন না । তিনি বিশ্বাস করতেন শাসক চক্র কোন ভাবেই সত্যিকার সংস্কার মূলক কাজ করতে দিবে না, এবং একেই ভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সামাজিক বিপ্লবের কথা বলতেন, একেই ভাবে বিশ্বব্যাপী সকল প্রকার একনায়কত্ব, আমলাতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে মুক্ত শ্রমজীবী মানুষের ফেডারেশন কায়েম করে শান্তিময় জীবন যাপনের কথা বলতেন। যেহেতু তাঁর সমসাময়িক অনেকেই মনে করতেন যে, দুনিয়া জোরে বিপ্লব খুবই নিকটবর্তী তাই তিনি তাঁর সকল শক্তি দিয়ে বিপ্লব যেন সত্যিকার বিপ্লব হয় সেই দিকে কড়া নজর রাখতেন, সকল মুক্তিবাদি শক্তিকে সংগে নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরের পুরাতন ব্যবস্থার উচ্ছেদের পর যেন সেই ব্যবস্থার কোন প্রকার ক্ষতি বা একনায়কত্বের আভির্ভাব না হয় তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আর সেই জন্যই তাকে আধুনিক এনার্কিস্ট বা নিরাজবাদি আন্দোলনের প্রবর্তক বলা হয়।
এনার্কিজম বা নিরাজবাদের একজন অন্যতম চিন্তক ছিলেন পিটার ক্রপতকিন, তিনি আধুনিক প্রকৃতিক বিজ্ঞানের সাথে সমাজ বিজ্ঞানের ধারনার সমন্বিত করে নিরাজবাদের ধারনাকে অধিকতর শক্তিশালী করতে চেয়ে ছিলেন। তিনির তাঁর বিখ্যাত তত্ত্ব ‘মিউচুয়াল এইড’ এ বিবর্তনবাদ সম্পর্কিত তথাকথিত সামাজিক তথ্যবাদের তালিকার বিরুধিতা করেন, তিনি চেষ্টা করেন ডারউইনবাদের মতে, ‘কেবল দূর্বলদের তুলনায় শক্তিমানরাই ঠিকে থাকে’, এই তত্ত্ব সকল ক্ষেত্রে সঠিক না ও হতে পারে, যেখানে সামাজিক মানুষ হয় এর বিষয় বস্তু, সেখানে কঠিন আইনের যাতাকলে পড়ে অনেক সক্ষম মানুষ ও বিপদাপন্ন হয়ে পড়তে পারে। এই কথা টি ম্যালতুসিয়ান তত্ত্বের দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়, যেখানে জীবন প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করে দেয় । সেই ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মানুষ নিজেই সেই সত্য প্রতক্ষ্য করে থাকে।
ক্রপতকিন দেখিয়ে দেন যে, প্রকৃতির জগতে যেমন একটি অনিশ্চিত লড়াই সংগ্রাম চলে, বাস্তবের জগতেও সেই সংগ্রামই অব্যাহত আছে, সেখানেও চলছে ঠিকে থাকার এক প্রকারের নির্দয়, নিস্টুর সংগ্রাম। সেই লড়াই ও মরন পন লড়াই, সেখানে ও প্রকৃতিক বিধানের ন্যায় চলছে দূর্বলের উপর সবলের প্রধান্য বজায় রাখার এক নিরন্থর যুদ্ব। সামাজিক বিবর্তন এবং সামাজিক সম্মিলিত সহায়তার মাধ্যমেই মানব সমাজ এখনো ঠিকে আছে।
এই অর্থে মানুষ সমাজের নির্মাতা নয়, বরং সমাজই সৃষ্টি করেছে মানুষকে, ঐতিহাসিক ভাবে নানা ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে, নানা জাতি ও প্রজাতির বিবর্তনের মধ্য দিয়ে, একে অন্যের উপর প্রাধান্যের সৃষ্টি করার জন্য শারিরীক বিকাশ ও সামাজিক শাক্তিভিত এবং উন্নত পরিবেশ গড়ে তুলেছে। মানুষের মাঝে দ্বিতীয় যে প্রবনতাটি লক্ষ্যনীয় তা হলো, তাঁদের বিরুদ্বে কোন আক্রমন ও আগ্রাসনের মোকাবিলা করার প্রবনতা, যা অন্য কোন প্রজাতির মধ্যে দেখা যায়না, এমন কি তাঁদের শারিরিক শক্তি বেশী হলে ও তাঁরা ক্রমাগত প্রতিরোধের পথে হাঁটে না। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকৃতিক বিজ্ঞানে এখন একটি স্বিকৃত বিষয়ঃ মানব প্রজাতির বিবর্তনের বিষয়ে আজ সামাজিক চিন্তকগন এক নয়া দিগন্তের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রকৃত বিষয় হলো প্রচলিত ব্যবস্থায় মানুষ ব্যাক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুক্তিবাদি সামাজিক চুক্তির দ্বারা আবর্তিত হয়ে থাকে, পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকে, এই সকল উপাদান না থাকলে মানব জীবন অসম্ভব হয়ে পড়বে। সামাজিক মুক্ত চুক্তি যদি বহাল না থাকত তবে রাষ্ট্রে অনেক কঠিন আইন ও সমাজকে বাঁচাতে পারত না । তবে, প্রকৃতিক সেই আচরনিক দিক গুলো মানষের ভেতর থেকেই উত্থিত হয়েছে, যা এখন রাস্ট্রীয় খবরদারী ও অর্থনৈতিক শোষনের কারনে পদে পদে বাঁধা গ্রস্থ হয়ে চলেছে। এই সকল কারনে মানুষের মধ্যে নিস্টুর ও নির্দয় আচরন লক্ষ্য করা যায়, এই অবস্থার অবসান চাইলে কেবল মাত্র সম্মিলিত সহায়তা ও মুক্ত সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ব্যাক্তিগত দায়িত্ববোধ, অন্যান্য মানবিক ভালো গুনাবলী গুলো সূপ্রাচীন কাল থেকে মানব সমাজে চর্চিত হয়ে এসেছেঃ তা মানুষের মাঝে জন্ম দিয়েছে পরস্পরের প্রতি সহানুভুতি, সামাজিক নৈতিকতা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার ও স্বাধীনতা।
বাকুনিনের মতই ক্রপতকিন ও বিপ্লবী ছিলেন। কিন্তু তিনি, এলিজ রিক্লোজ এবং অন্যান্য যারা মনে করতেন বিপ্লব নয় বিবর্তনের ভেতর দিয়ে অন্যান্য প্রজাতির মতই বিপ্লব বা পরিবর্তন হবে, তবে তখনই সেই পরিবর্তন দেখা যাবে যখন সমাজকে প্রকৃতিক পরিবেশের ন্যায় চলতে দেয়া হবে বা কর্তৃত্ববাদি ব্যবস্থা থেকে মানবজাতি মুক্তি পাবে। বাকুনিন ও প্রদুর মত ক্রপতকিনও সমাজ ভিত্তিক মালিকানার পক্ষে কথা বলেছেন, কেবল উৎপাদন যন্ত্রের উপর নয়, উৎপাদিত পন্যের উপর মালকানার ও তিনি দাবী করেছেন। তাঁর মতে, প্রচলিত ব্যবস্থায় যে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে এতে একজন শ্রমিকের ব্যাক্তিগত শ্রমের পরিমান তাঁর মূল্য নির্নয় করা বেশ জটিল বিষয় । তাই সকল মানুষের সম্মিলিত মালিকানা কায়েম করলেই সকলের উন্নয়ন ও কল্যাণ হয়। কমিউনিস্ট এনার্কিজম, যার পক্ষে এর আগে যারা কথা বলেছেন, তাঁরা হলেন জুসেফ ডিজাকু, এলিজ রিক্লোজ, এরিক মালাতিস্তা, কার্লো ক্যাপিরো এবং অন্যান্য চিন্তকগন। এখন এর পক্ষে আরো অনেক বুদ্বিজীবী ও চিন্তককে কথা বলতে দেখা যায়।
সাধারন ভাবে সকল নিরাজবাদি বা এনার্কিস্টদের লক্ষ্য হলো, এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলা যেখানে কোন প্রকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিপিড়ন থাকবে না, কেননা এই সকল নিপিড়ন মূলক কর্মকান্ড মানুষের সত্যিকার উন্নয়নের জন্য কঠিন বাঁধা। এই দিক থেকে দেখা যাবে মিউচুয়ালিজম, যৌথতাবাদ, এবং সাম্যবাদ মানুষের উন্নয়নের জন্য খুবই সহায়ক বিষয়, কিন্তু কেবল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মানুষের স্বাধীন সমাজ বিনির্মানের জন্য সুরক্ষক হিসাবে কাজ করতে পারে না। আগামীতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের গতি প্রকৃতি লক্ষ্য করা যেতে পারে, সমাজের ও নানা ধরন ও বিবর্তন হতে পারে, কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে একটি প্রকৃত স্বাধীন পরিবেশ বজায় না থাকলে সত্যিকার মানবিক উন্নয়ন আশা করা যায় না ।
এনার্কিস্ট বা নিরাজবাদিদের মধ্যে সমাজ পরিবর্তন নিয়ে নানা ধরনের মতামত আছে। অনেকেই মনে করেন, একটি প্রচণ্ড লড়াই সংগ্রাম ছাড়া সমাজ বিপ্লব বা সামাজিক পরিবর্তন হবে না । সেই সংগ্রামের তিব্রতা নির্ভর করবে যারা সামাজিক পরিবর্তন চায় না তাঁদের প্রতিরোধের শক্তির উপর, নয়া সমাজ ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষেত্রে তাদের প্রক্রিয়াশীল কর্মকান্ডের আকার ও বিস্তৃতির উপর। স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ গ্রহনের জন্য সামাজিক নানা স্তরে তাঁর দাবী উত্থোলন আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করার উপর ও নির্ভর করছে সামাজিক পরিবর্তনের সময়ে কেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমরা চাই সামাজিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে কম মাত্রার ক্ষয় ক্ষতি ও সহিংসতা যেন বজায় রাখা যায় সেই বিষয়ে সতর্ক রয়েছি।
আধুনিক এনার্কিজম বা নিরাজবাদ দুইটি বিরাট ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, এর একটি হলো ফ্রান্সের বিপ্লব এবং এবং ইউরূপীয়ান বুদ্বিজীবী মহলের কর্ম প্রয়াসঃ সাম্যবাদ ও মুক্তিবাদ। আধুনিক সমাজবাদ সমাজ জীবন ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চায়। এটা সরকারের বিলয় ঘটিয়ে সামাজিক প্রশ্নকে উজ্জল করে তুলতে চায় । মানবজাতির মধ্যে সাম্য মৈত্রী কায়েম করে, তত্ত্বগত ধারনার পরিবর্তে বাস্তব দুনিয়ায় একটি উজ্জল দৃস্টান্ত প্রতিস্টা করতে চায়। যা সামাজিক জীবনে এক নয়া দিগন্তের উন্মোচন হবে। নয়া সমাজে অর্থনৈতিক একচাটিয়াবাদ বিদূরিত হবে, উৎপাদন ব্যবস্থার উপর সাধারন মানুষের মালিকানা কায়েম হবে, এক কথায় সমাজ একেবারে আমূল পাল্টে যাবে, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য প্রতিস্টান সমূহের ধরন প্রকৃতি ও পরিচালন পদ্বতী বদলে যাবে । কায়েম হবে সত্যিকার সামাজিক ন্যায় বিচার অবসান হবে শোষণের। সকলেই সকলের জন্য কাজ করার পরিবেশে অভ্যস্থ হয়ে উঠবেন। সমাজবাদ একটি আন্দোলনের মত সকল জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে, নানা সমাজে, নানা দেশে ভিন্ন ভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে বৈচিত্রময় সামাজিক পরিবেশে সামগ্রীক সংহতির অভিপ্রকাশ ঘটবে। প্রকৃত ঘটনা হলো প্রতিটি রাজনৈতিক মতবাদই কোন না কোন ভাবে একনায়কত্ব বা ধর্মীয় পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসেছে, সমাজবাদি আন্দোলন ও এর দ্বারা একটি অংশ আক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে, রাজনীতির শ্রুতধারায় দুইটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় যুক্ত হয়েছে এবং সমাজবাদি ধারনার উন্নয়ন ঘটিয়েছেঃ মুক্তিবাদ, যা এংলো-সেক্সন দেশ সমূহে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষ করে স্পেনে। আরো স্পষ্ট করে বলতে হলে বলতে হয় গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা যা চিন্তক রুশো তাঁর সামাজিক চুক্তি নামক বইতে বলেছেন, এই চিন্তাভাবনা এক কালে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো ফ্রান্সের নেতা জে, জ্যাকবিনের উপর। মুক্তিবাদি এই ভাবনা যখন তাত্ত্বিকভাবে প্রচলন হয় তখন বলায় হয় রাষ্ট্রীয় প্রভাব কমিয়ে সামাজিক শক্তির উন্মেষ ঘটাতে হবে । রুশো গণতন্ত্রকে একটি সম্মিলিত একটি ধারনার উপর দাঁড় করিয়ে দেন। তিনি “সাধারনে ইচ্ছে” কথাটির উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন, তাঁর এই বক্তব্যকে জাতি রাষ্ট্র বলা হয়েছে।
মুক্তিবাদ এবং গণতন্ত্র রাজনীতির প্রথমিক সবক হিসাবে অভির্ভূত হয়, সেখানেই সংখ্যা গরিস্ট মানুষের মতামতকে গ্রহন করতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়, কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়কে তার আওতায় আনা হয়নি। বা আজো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরাসরি যুক্ত হয়নি। গণতন্ত্র তাঁর মূলনীতি হিসাবে ঘোষনা করেছে, “আইনের চোখে সকলেই সমান”, এবং তাঁর সাথে মুক্তিবাদ “ প্রতিটি ব্যাক্তি তাঁর নিজের বিষয়ে নিজেই সিদ্বান্ত গ্রহনের অধিকারী”। এই উভয় নীতি ই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করেছে। তাই আমরা দুনিয়ার সকল জায়গায় দেখতে পাচ্ছি, বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ শ্রমশক্তি, অল্প কিছু মানুষের নিকট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। যদি নিজের শ্রম বিক্রি করতে না পারে, তাঁরা যদি ক্রেতা না পান, তবে একজন শ্রমিক সমূদ্রের জাহাজের মত তলিয়ে যেতে পারেন। তাই তথাকথিত “আইনের চোখে সকলেই সমান” কথাটি একটি ধান্দাবাজের উপদেশের মতই শোনায়, যারা আইন বানায় তারাই সমাজের সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক। একেই ভাবে একেই কথা প্রযোজ্য হলো, “নিজের বিষয়ে নিজেই সিদ্বান্ত গ্রহনের অধিকার” নীতির প্রশ্নে । এই ধরনের অধিকারের মৃত্যু ঘটে তখনই যখন কোন ব্যাক্তির আর্থিক বিষয়ে অন্যের দয়ার উপর নির্ভর করে সিদ্বান্ত গ্রহন করতে বাধ্য হয়। তখন তাঁর স্বীয় সকল প্রয়াস অর্থহীন হয়ে যায়।
Comments