এনার্কিজম হল এমন একটি পথ ও পন্থা বা উপায় যা সকল মানুষকে বিদ্যমান সব বাঁধা থেকে স্বাধীন ও মুক্ত করে দেয়; এটা ব্যাক্তি ও সমাজের মধ্যে ন্যায় সংগত পন্থায় একটি সুসমন্ব সাধন করে থাকে। মানুষের ঐক্য ও সংহতি বিধানের ক্ষেত্রে যে সকল বাঁধা আছে তা দূরী করনের জন্য প্রয়োজনে যুদ্ব ঘোষনা করে। ব্যাক্তি মানুষ ও সমাজের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক সৃজনে ভূমিকা রাখে।
নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( চতুর্থ পর্ব)
এ কে এম শিহাব
এনার্কিজম হল এমন একটি পথ ও পন্থা বা উপায় যা সকল মানুষকে বিদ্যমান সব বাঁধা থেকে স্বাধীন ও মুক্ত করে দেয়; এটা ব্যাক্তি ও সমাজের মধ্যে ন্যায় সংগত পন্থায় একটি সুসমন্ব সাধন করে থাকে। মানুষের ঐক্য ও সংহতি বিধানের ক্ষেত্রে যে সকল বাঁধা আছে তা দূরী করনের জন্য প্রয়োজনে যুদ্ব ঘোষনা করে। ব্যাক্তি মানুষ ও সমাজের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক সৃজনে ভূমিকা রাখে।
মানুষের মনোজগতে ধর্ম একটি প্রবল প্রভাবশালী বিষয়; মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য সম্পদ হলো একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান; মানুষের আচরনকে নিয়ন্ত্রন করতে প্রভাবকের ভূমিকায় আছে সরকার, এই তিনটি বিষয় মানব সমাজকে অক্টোপাশের মত ঘিরে রেখেছে। অলৌকিক বিশ্বাস মানুষের মনোজগতের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে মানুষের আত্মাকে মেরে ফেলে। লুকানো শক্তিই সব কিছু, মানুষ কিছুই নয় এমন একটা ধারনার প্রচলন আছে। নিরাজবাদ শিক্ষা দেয় চারপার্শ্বের সকল কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে নিজের পথ টি পরিস্কার করে নেয়ার মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান নিহিত আছে ।
মানুষের চাহিদার উপর প্রবল প্রভাব রাখে সম্পদ, এটা অধিকারের চেয়ে বেশী কাজ করে চাহিদা নিবারনের জন্য। সম্পত্তির উপর মানুষের অধিকার ও এক কালে ধর্মীয় বিধানের মতই কার্যকরী ছিলো। “দান কর ! অর্পন কর! বলি দাও!” এনার্কির চেতনাওই মানুষকে সেই সমর্পিত অবস্থান থেকে সরিয়ে এনেছে। মানুষ এখন আলোর দিকে ফেরেছে। মানুষ শিখেছে, সম্পত্তি এখন বিপদজন হয়ে উঠছে, নির্যাতন নিপিড়নের মাধ্যম হয়ে উঠেছে, এটা এখন এক ভয়ঙ্কর দৈত্যের রূপ নিয়েছে। এই দৈত্য ব্যবহার করতে কিছু মানুষ ও রাষ্ট্র এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সের মহান দার্শনিক প্রুধো বলেছিলেন, “সম্পত্তি হলো ডাকাতির মাল”। হ্যাঁ এটা তাই। পুঁজি খাঁটিয়ে, ব্যবসা বানিজ্যের মাধম্যে সাধারন লোকদের শ্রমের মূল্যকে একছেটিয়া ভাবে পুঞ্জিভূত করার মাধম্যেই সম্পদের সমাহার ঘটে। সম্পদ উৎপাদন হয় ঠিকই কিন্তু সকলের চাহিদা কিন্তু মেটানো হয় না । একজন সাধারন মানুষ ও এটা জানেন যে বিগত কয়েক দশক ধরে দুনিয়া এমন জায়গায় এসেছে যে এখন চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী সম্পদ উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারন মানুষের চাহিদা মেটাতে উপযোগী প্রতিস্টান কি গড়ে উঠেছে? পুরাতন সংস্থা সমূহ সম্পদকে তাঁদের ক্ষমতার উৎস হিসাবে ব্যবহার করছে। সুষ্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের চাহিদা মেটাতে চাইছে না । বরং সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে আরো শোষণ, নিপিড়ন এবং মানুষকে দাসে পরিণত করতে চাইছে । আমেরিকা নিজের ক্ষমতা আরো বাড়াতে চাইছে, আরো সম্পদ লুন্ঠন করে আরো ধনী হতে চাইছে। বিপুল সম্পদের মালিকানা অর্জন সত্ত্বে ও এরা হতাশা, ভয় ও নিরান্দ জীবন যাপন করছে। সেনাবাহিনী পরিবেষ্টিত জাতি হিসাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলছে । যা একেবারেই স্বাভাবিক মানব সমাজ নয়।
সাধারণত বলা হয় কোন ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহন কারী ব্যাক্তি যদি লাভের চেয়ে বেশী খরচ করেন তবে, অনিবার্য ভাবেই তিনি দেওলিয়া হয়ে যান। কিন্তু যারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তারা এই সাধারন শিক্ষা টি এখনো শেখেননি। এক হিসাবে দেখা গেছে আমেরিকায় প্রতি বছর উৎপাদন কার্যে প্রায় ৫০,০০০ হাজার লোক মারা যায় আর প্রায় ১০০,০০০ লোক আহত হন। যারা সম্পদ সৃষ্টি করেন তাঁরা পায় কম, অন্যদিকে সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠছে, তাঁদের অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। আমেরিকা আজো উতপাদক দেওলিয়া লোকদের প্রতি অন্দ্ব হয়ে আছে। এই ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই অপরাধ মূলিক কাজ হিসাবে গন্য। ষ্টীল ও লোহার শিল্পের কর্মে যারা নিয়োজিত তারা তাঁদের মালিক শ্রেনীর দ্বারা আরো বেশী শোষিত হচ্ছে। যা ক্রমে বিপদজনক হয়ে উঠবে। মানুষ কেবল তাঁর শ্রমের পন্য নয়, বরং তাঁর মধ্যে মুক্ত উদ্যোগক্তা, মৌলিকত্ব ও বিদ্যমান আছে। সে তাঁর ইচ্ছে শক্তির মাধ্যমে অনেক চমৎকার কাজ করতে পারে।
চলমান ....
Comments