নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( পঞ্চম পর্ব)

এ প্রসঙ্গে মার্কিন সরকারের কথা উল্লেখ করা যায়, আমেরিকার মহান এনার্কিস্ট চিন্তক, ডেভিড থিউ বলেন, “ সরকার এখন যতটা না কার্যকর তাঁর চেয়ে বেশী ঐতিহ্য হিসাবে চলছে, অনেকেই সরকার চালাতে নানা প্রকার জোড়াতালি দেবার চেষ্টা করছেন, কিন্ত কিছুতেই শেষ রক্ষা ও হচ্ছে না; নানা ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে অনৈতিকতা ও অব্যবস্থপনা। রাষ্ট্র এখন আর প্রাণবন্ত সংস্থা নয়, এটা জীবন্ত মানুষকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। আইন মানুষকে আর ন্যায় বিচার দিতে পারছেনা ; এটাকে নিজেদের ইজ্জত রক্ষার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছে, দৈনিন্দন ঘটনা প্রবাহে অন্যায়ই পরিস্ফুট হয়ে উঠছে”।

Submitted by akmshihab on April 7, 2018

নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( পঞ্চম পর্ব)

এ কে এম শিহাব

এ প্রসঙ্গে মার্কিন সরকারের কথা উল্লেখ করা যায়, আমেরিকার মহান এনার্কিস্ট চিন্তক, ডেভিড থিউ বলেন, “ সরকার এখন যতটা না কার্যকর তাঁর চেয়ে বেশী ঐতিহ্য হিসাবে চলছে, অনেকেই সরকার চালাতে নানা প্রকার জোড়াতালি দেবার চেষ্টা করছেন, কিন্ত কিছুতেই শেষ রক্ষা ও হচ্ছে না; নানা ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে অনৈতিকতা ও অব্যবস্থপনা। রাষ্ট্র এখন আর প্রাণবন্ত সংস্থা নয়, এটা জীবন্ত মানুষকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। আইন মানুষকে আর ন্যায় বিচার দিতে পারছেনা ; এটাকে নিজেদের ইজ্জত রক্ষার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছে, দৈনিন্দন ঘটনা প্রবাহে অন্যায়ই পরিস্ফুট হয়ে উঠছে”।

এখন সরকার সাধারন মানুষের সামনে আন্যায়ের প্রতীক হয়ে উঠছে। এক কালে একটি কথার ব্যাপক প্রচলন ছিল যে রাজা মশায়ের কোন প্রকার ভূল নেই। এখন সরকার সমূহ ও ক্ষমতার পরিধি এত বাড়িয়ে দিচ্ছে যে এরা যে কোন কিছু কে নিন্দা জানাতে, বিচার করতে, এবং শাস্তি দিতে পারে। লগু অপরাধে গুরু দন্ড আবার গুরু অপরাধে লগু দন্ড দিতে তাঁদের কোন সমস্যাই হয় না । রাষ্ট্র ব্যাপক ক্ষমতার মালিক হয়ে বসেছে। রাষ্ট্রের অধিকার জনগণের অধিকারকে দলিত করলেও কেঊ কিছু করতে পারে না । রাষ্ট্রের লক্ষ্যই থাকে এমন কিছু করতে যা দেখে জনগণ কোন ভাবেই এর বিরুধীতা করার সাহস যেন না পায় । রাট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ছিলো মানুষের কায়িক শ্রম ও যন্ত্রনাকে লাগব করা, নিরাপত্তা দেয়া । ব্যাক্তি স্বাধীনতার পরিবেশ তৈরী করা এবং সু স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভাল ও উন্নত চিকিতসার ব্যবস্থা করা । জনগণ যথাযথ ভাবেই কর দিয়ে যাচ্ছে, তাঁর ব্যাতিক্রম হবার উপায় নেই। অথচ রাষ্ট্র মানুষকে দুই দিকে উঁচু দেয়াল তুলা একটি সরু রাস্তা দিয়ে মানুষকে হাটতে বাধ্য করছে।

রাস্ট্র যতই অন্যায় অবিচার, দুর্নীতি, ও স্বৈরাচারী ই হোক না কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্বে অল্প লোক হলে ও বিদ্রোহ করবে। যাদেরকে সেবার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে তারা যখন প্রভু হয়ে বসেন তখন এদেরকে তাড়ানো ছাড়া তো আর কোন পথ থাকে না । তাই বাকুনিন রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুধিতা করেছিলেন এই যুক্তিতে যে, রাষ্ট্র ব্যাক্তি ও সংখ্যা লগুদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। এটা সামাজিক সম্পর্কে ফাটল ধরায়, মানুষের প্রানবন্ততাকে সিমীত করে দেয় এমন কি অনেক ক্ষেত্রে অস্বীকার করে । রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিলো স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে, এটাকে ধর্মের মতই মানুষ জীবন বলি দিয়ে সুরক্ষার চেষ্টা করে ইতিহাসের নানা বাঁকে।

আজ ও বেশীর ভাগ চিন্তাবিদ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সুরক্ষা, সম্পত্তিতে একছাটিয়া অধিকার, পদপদবীর সোপান ইত্যাদিতে আস্থাশীল। তা তারা তাঁদের চিন্তা ভাবনায় ও কর্মে প্রকাশ করে যাচ্ছেন।

এমন কি জর্জ বার্নাড শ ও ফেবিয়ানবাদের আওতায় এক প্রকার আলৌকিক পন্থায় রাষ্ট্রের মাধ্যমে মুক্তি ছেয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য হলোঃ “ রাষ্ট্র এখনো দাস-দাসী ও ক্ষতিকর দরিদ্রদেরকে কাজে লাগাবার একটি বিশাল যন্ত্র”। তা হলে দারিদ্র চলে গেলে রাস্ট্রকে ও চলে যেতে হবে।

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সত্য যে, এখনো অনেক লোক বিশ্বাস করেন যে, সরকার প্রাকৃতিক ন্যায় বিচারের উপর নির্ভরশীল, এটা সামাজিক সংহতি বাজায় রাখার জন্য কাজ করছে, এটা অপরাধের বিলয় ঘটাচ্ছে এবং অলস লোকদেরকে কর্মঠ করে তুলছে। তাই আমি এই বিষয় গুলো নিয়ে সামনে আরো আলোচনা করব। চলবে....

Comments

Related content