সাধারন আমাদের অঞ্চলে “এনার্কি বা নৈরাজ্য” শব্দটিকে ভুল ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লোকেরা একে অবিচার ও সন্ত্রাস মনে করে থাকে। প্রচলিত ভাবে মানুষ চিন্তা করেন যে, সরকার, পুলিশ, উঁচু মহলের নির্দেশনা, সামাজিক জীবন, ও রাজনৈতিক দল এবং কার্যক্রম ছাড়া চলা যায় না – সেই দৃস্টিতে তাঁদের ধারনা সঠিক - এনার্কিজম মানেই হলো সরকারে বিলয় ও উচ্ছেদ। কিন্তু যারা এই ধারনার সম্পূর্ন বিপরীত চিন্তা করেন তারা মনে করেন, সরকার হলো স্বৈরাচারী এক ব্যবস্থার নাম।
নিরাজবাদ : কতিপয় ভাবনা
এ কে এম শিহাব
মানবজাতি মুক্তভাবে জন্মগ্রহন করে !
আমাদের ন্যায্য অধিকার অলংগনীয় বিষয়। প্রতিটি লোক তাঁর পূর্ববর্তী প্রজন্মের উত্তরাধিকার হিসাবে জন্মায়। জন্মগত ভাবেই আস্ত দুনিয়াটা আমাদেরই। কিন্তু সাথে সাথে কিছু দায়িত্ব মাথার উপর চেপে বসে বা অর্পিত হয়। দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের প্রতি কর্তব্য। প্রভুর প্রার্থনা করা। উঁচু শ্রেনী বা কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য ও উত্তারাধীকারের প্রতি সুবিধার জন্য সম্মান প্রদর্শন – এই সবই ভূয়া। মিথ্যা!
মানুষ যদি সত্যি মুক্ত ভাবে জন্মায়, তবে দাসত্ব হলো তাঁর জন্য মৃত্যু !
কোন মানুষই কোন মানুষকে শাসনের উপযুক্ত নয় । কোন দিনই কেহ দাবী করতে পারেন না যে মানুষ সম্পূর্ন ত্রুটি মুক্ত। কেহ একক ভাবে বা প্রাকৃতিগত আবে নিজেকে পরিপূর্ন করতে ও পারেন না । যা তাঁকে শাসক হিসাবে বিবেচনা করা যায়। সেই সকল ক্ষেত্রে শাসন কার্যের নামে অপকর্মই হয়ে থাকে। আসলেই কোন অতিমানব নেই বা অতি গুনাবলীর অধিকারী লোকের শ্রেনী ও নেই যারা “ত্রুটি পূর্ন” মানব জাতির শাসন করতে পারেন । দাসত্ব মেনে নেয়া আসলেই জীবনের পরাজয় মাত্র।
দাসত্ব যেমন মৃত্যু, সম্পদ ও চুরির মাল !
মানুষ কোন ভাবেই তাঁর প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারে রাজ্যে পৌছতে পারে না । নানা বাঁধা বিপত্তি তাঁকে পদে পদে আটকে দেয় ( কখন ও আইনের দোয়াই দিয়ে বা শক্তি প্রয়োগ করে তা করা হয়) বা চালাকি করে ( রাষ্ট্র ও তাঁর কর্মকর্তাদেরকে হাত করে এক শ্রেনীর লোক সম্পদের মালিকানা অর্জন করে ফেলে। এবং সকল সুবিধা ভোগ করে)। প্রচলিত ব্যবস্থাটাই হলো এক দল মানুষের শ্রমের ফল আরেক দল কেড়ে নিবে। এটা সত্য যে একটি প্রতিযোগীতা মুলক সমাজে, স্বাধীন ভাবেই এক দল লোক সম্পদের মালিকানা পেয়ে থাকেন। ( কিন্তু মহান চিন্তক প্রুধু দেখিয়েছেন, সত্যিকার স্বাধীনতাই হলো সম্পদের মালিকানা “সম্পদ ই স্বাধীনতা” সভ্যতার সূচনা লগ্নেই এক শ্রেনীর মানুষ তা চুরি করে আত্মসাৎ করে ফেলেছে)। তবে, মালিকার সাধারন নীতিই হলো, এটা সামাজিক কাঠামোর সাথে জড়িত, এটা সমাজের নিম্ন স্তর পর্যন্ত অসাম্য সৃজন করে থাকে ।
সম্পত্তি যদি হয় চুরির মাল, তবে সরকার হল স্বৈরাচার !
আমরা যদি একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজে বাস করি, এবং সামাজিক শ্রেনীর উচ্ছেদ করি, রাস্ট্রকে যদি অদরকারী করে ও তুলি । কিন্তু রাষ্ট্র যদি ঠিকে থাকে তবে সে নিজের অস্থিত্বের জন্য চেষ্টা করেবেই। “ স্বাধীনতা ছাড়া সমাজতন্ত্র অর্থহীন, আবার সমাজতন্ত্র ছাড়া স্বাধীনতা মূল্যহীন” বলেছিলেন মাইকেল বাকুনিন।
সরকার যদি হয় স্বৈরাচার তবে নিরাজবাদ হলো স্বাধীকার !
সাধারন আমাদের অঞ্চলে “এনার্কি বা নৈরাজ্য” শব্দটিকে ভুল ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লোকেরা একে অবিচার ও সন্ত্রাস মনে করে থাকে। প্রচলিত ভাবে মানুষ চিন্তা করেন যে, সরকার, পুলিশ, উঁচু মহলের নির্দেশনা, সামাজিক জীবন, ও রাজনৈতিক দল এবং কার্যক্রম ছাড়া চলা যায় না – সেই দৃস্টিতে তাঁদের ধারনা সঠিক - এনার্কিজম মানেই হলো সরকারে বিলয় ও উচ্ছেদ। কিন্তু যারা এই ধারনার সম্পূর্ন বিপরীত চিন্তা করেন তারা মনে করেন, সরকার হলো স্বৈরাচারী এক ব্যবস্থার নাম। তারা ও মনে করেন সরকার ছাড়াই সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব। সরকার যখন ই ব্যবস্থাপনায় অদক্ষ ও শোষন নিপিড়ন নিবারনে বিফল হয় তখনই – সমাজে এনার্কি অনিবার্য ভাবে দেখা দেয় । চলবে ...
Comments