নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( ষষ্ঠ পর্ব)

প্রাকৃতিক জগতের আইন প্রয়োগের জন্য কোন প্রকার জবরদস্তির দরকার পরে না, এটা প্রকৃতির মধ্যেই স্বপ্রনদিত হয়ে চালু থাকে- বাস্তবায়িত হয়। উদাহরন হিসাবে উল্লেখ করা যায়, মানব দেহে পুস্টি চাহিদা, যৌন কর্মের আকাঙ্ক্ষা, আলো ও বাতাস তার নিজস্ব গতিতেই পরিচালিত হয়। এই সকল আইন বা নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সরকার, ক্লাব, বন্দুক, হাত করা বা কারাগার দরকার হয় না ।

Submitted by akmshihab on April 9, 2018

নিরাজ সমাজঃ আসলে কি চায় ? ( ষষ্ঠ পর্ব)

এ কে এম শিহাব

প্রাকৃতিক জগতের আইন প্রয়োগের জন্য কোন প্রকার জবরদস্তির দরকার পরে না, এটা প্রকৃতির মধ্যেই স্বপ্রনদিত হয়ে চালু থাকে- বাস্তবায়িত হয়। উদাহরন হিসাবে উল্লেখ করা যায়, মানব দেহে পুস্টি চাহিদা, যৌন কর্মের আকাঙ্ক্ষা, আলো ও বাতাস তার নিজস্ব গতিতেই পরিচালিত হয়। এই সকল আইন বা নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সরকার, ক্লাব, বন্দুক, হাত করা বা কারাগার দরকার হয় না । এই ধরনের নিয়ম বিধি মেনে চলার জন্য দরকার কেবল মাত্র স্বাধীন পরিবেশ। দুনিয়ার সরকার গুলো মোটেই এই নিয়ম মানেন না, তারা সর্বদাই শক্তি প্রয়োগ, সহিংসতা, প্রতিশোধ পরায়নতার পন্থা অনুসরন করে মানুষের আনুগত্য অর্জন করতে চেষ্টা করে। তাই আইনবিদ ব্ল্যাকস্টোন বলেন, “ মানবের আইন অবৈধ, কারন এই আইন গুলো প্রকৃতি বিরুধী”।

ওয়ার্শোর নির্দেশ পাবার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে নির্মম ভাবে, এই ক্ষেত্রে এটা বুঝা মুশকিল যে সরকার সত্যি মানুষের সামাজিক সংহতি চায়। নির্মমতা, নির্যাতনের মাধ্যমে যে আনুগত্য আদায় করা হয় সেখানে ক্ষমতা অর্পন করা একেবারেই নিরাপদ নয়; আমরা বিগত দিন গুলোতে এই চিত্রটিই দেখে আসছি। প্রকৃতিক ও স্বপ্রনোদিত অবস্থায়ই আমরা মানুষের মাঝে সত্যিকার সহমর্মিতা দেখতে পাচ্ছি। ভেবে দেখুন ! যে সমাজে যারা সর্বদা খেটে মরে তারা তেমন কিছুই পায় না, আর যারা তেমন কিছুই করেন না তারা সকল কিছুই পায়; তা হলে যে সামাজিক সংহতি বা বন্দ্বনের কথা বলায় তা এখন প্রহেলিকা মাত্র। এখনো যারা এই পৃথিবী নামক গ্রহের নিয়ন্ত্রনকারী তারা সকল ভোগ বিলাশের সামগ্রী নিজেরাই ভোগ করছেন আর চেষ্টা করে যাচ্ছেন যারা তাঁদের দাসত্বের আওতায় আসেনি তাদেরকে ও দাসানু দাসে পরিণত করতে । সরকার সমূহের – আইন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, আদালত, সংসদ ও কারাগারকে সেই তথাকথিত “সামাজিক সংহতি” র নামে ব্যবহার করছে।

আইন এবং কর্তৃপক্ষের নিকট এক অদ্ভুত বিষয় হলো যে তারা নাকি অপরাধ হ্রাস করছেন। পক্ষান্তরে, আমরা দেখি রাস্ট্রই হলো সবার চেয়ে বড় অপরাধী, এটাই লিখিত ও প্রকৃতির আইন ভঙ্গ করে চলেছে, করের টাকা নানাভাবে মেরে দিচ্ছে, যুদ্ব ও ক্যাপিটাল পানিসম্যান্টের নামে মানুষ হত্যা করছে, রাষ্ট্র কোনভাবে অপরাধ থামাতে পারছে না। বরং বাড়িয়ে দিচ্ছে অপরাধ ও অপরাধের পরিমান। অনেক ক্ষেত্রে নিজেই অপরাধের মেশিন হয়ে অপরাধ সৃজন করছে ।

অপরাধ আর কিছু নয় এটা হলো ভুল ভাবে চালিত মানুষের ক্ষমতা। যতক্ষন পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিস্টানের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নৈতিক দিক গুলো সঠিক ভাবে চালিত না হবে ততক্ষন পর্যন্ত অপরাধ থামবে না । যতদিন মানুষ অপরাধ মুলক কাজকে ঘৃনা করবে না, বা জীবন যাপনে পরিচ্ছন্নতা আনয়ন করবে না ততদিন অপরাধ ঘটতেই থাকবে। এখন আমরা সমাজে বাস করি সেই সমাজে কেবল আইনের সংখ্যা বাড়ে কিন্তু অপরাধের সংখ্যা কমে না । প্রচলিত সমাজে দারিদ্র, হতাশা, বেচে থাকার কঠিন লড়াই মানুষকে বেপরোয়া করে দেয়। এই সত্যটি পিটার ক্রপথকিন সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেনঃ

“ যারা মানবতার উপর আইনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আইন ও শাস্তির উপকারিতা যাচাই করেন; যারা সমাজের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে অন্যদেশের খবরের উপর নির্ভর করে গর্বীত হন বা বিচারকের পক্ষ নেন, বা সরকারের পক্ষ নিয়ে অর্থ উপার্জন করেন তারা প্রায়স ই অপরাধ বৃদ্বির জন্য কাজ করে থাকেন । আর যারা অপরাধের তকমা মাথায় নিয়ে কারাগারে যান তারা জানেন মানুষের স্বধীনতা কি ভাবে ভুলন্ঠিত হয়ে হয়। নির্মমতা, নিস্টুরতা তাঁদের হয় নিত্য সঙ্গী। মানুষকে অপমান অপদস্ত করে অপরাধ নির্মূল সম্ভব নয়” ।

Comments

Related content