নিরাজবাদিরা বলেন, ১৯১৪ সালের আগে থেকেই নানা ভাবে বিজয় অর্জন করে এসেছে, দরিদ্র কৃষক এবং কারিগর শ্রেনী ও বিপ্লবে ভূমিকা রাখতে পারেন, তবে নিরাজাদ সম্পর্কে শিল্প শ্রমিকদের চেয়ে তাঁদের মধ্যে কম প্রচার হয়েছে।
শ্রেণী সংগ্রাম
এ কে এম শিহাব
বিপ্লবী নিরাজবাদ বা এনার্কিজম আসলে শ্রেনী সংগ্রামের মাধম্যেই গড়ে উঠে, যদি ও নিরাজবাদি চিন্তকগণ মার্ক্সবাদি ধারায় এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে আগ্রহী নন, তারা এই বিষয়টিকে একটি অন্যমাত্রায় দেখে থাকেন। আর এই ধারাটি কোন যান্ত্রিক ধারার মত নয়।
নিরাজবাদ বা এনার্কিজমঃ মার্কস-এঙ্গেলসদের মতের ব্যাতিক্রম ধারায় নিরাজবাদিদের মতামত প্রবাহিত হয়, মার্ক্সিস্টগন মনে করেন, কেবল শিল্প শ্রমিকগন কর্তৃকই সমাজতন্ত্র কায়েম হতে পারে, এবং বিজ্ঞান সম্মতভাবে শ্রমিক শ্রেনীই চূড়ান্ত বিজয় আনতে পারে। পক্ষান্তরে, নিরাজবাদিরা বলেন, ১৯১৪ সালের আগে থেকেই নানা ভাবে বিজয় অর্জন করে এসেছে, দরিদ্র কৃষক এবং কারিগর শ্রেনী ও বিপ্লবে ভূমিকা রাখতে পারেন, তবে নিরাজাদ সম্পর্কে শিল্প শ্রমিকদের চেয়ে তাঁদের মধ্যে কম প্রচার হয়েছে। তাই আমরা দেখেছি, মার্ক্সবাদিরা নিরাজবাদিদেরকে পাতি বুর্জোয়া বলে সমালোচনা করেন। এই শব্দটির আধুনিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে মার্কসের বক্তব্যটি হাস্যকর বলে মনে হয়। মার্ক্স বুর্জোয়াদেরকে এই ভাবে পৃথক করেন ( যারা চাকুরী দাতা এবং ব্যবসায়ীদেরকে) এবং যারা সংখ্যায় অল্প । যেমন- স্ব কর্মে নিয়োজিত কর্মী।) মার্কস নিরাজবাদিদেরকে ‘পাতিবুর্জোয়া’ বলেন তাদেরকে জোর করেই পুঁজিবাদী সমাজে মিশিয়ে দেন। আর দরিদ্র কৃষক সমাজ এবং শিল্প সমাজের মধ্যে একটা ভাঙ্গন ধরিয়ে দেন, এই ধরনের বক্তব্য অনেকেই মেনে নিতে না পেরে সহিংসতার পথে এগিয়ে যান – কেননা এই ধরনের ধ্যান ধারনা অনেক লোককেই হতাশ করে ফেলে। তাঁর বক্তব্যে কেবল শিল্প শ্রমিকদের জন্যই নিশ্চয়তা ছিলো, বার্সেলুনা এবং পেরিস কমিউনের কিছু ঘটনার উল্লেখ করে তাঁর সময়ে অর্থনীতির ভাঙ্গনের প্রেক্ষিতে তিনি এই রকমের বক্তব্য হাজির করেন । এই পরিবর্তিত অর্থে নিরাজবাদিরা ও ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের মতই হতাশ হয়ে পড়েন যেমন ব্যাংকারদেরকে জোর করে শিল্পে নিয়োজিত করা হয়েছিলো। যা ছিলো সত্যি হাস্যকর প্রয়াস । মার্কস ভাবতেন, শিল্প শ্রমিকগন নিজেদের জন্য চিন্তা ভাবনা করতে পারেন না – অবসর লোক, স্বাধীন মানুষ ও স্বনিয়োজিত ব্যাক্তিদের মত যোগ্যতা সম্পন্ন তাঁরা নন । তাই ট্রেড ইউনিয়নের মানসিকতা সৃষ্টির জন্য ‘শিক্ষিত লোকদের’ নেতৃত্ব থাকা দরকার। যা বাহির থেকে ও আসতে পারে। যারা হয়ত হতাশায় ভোগবেন না । তাঁর এই ধরনের চিন্তাধারা ছিলো অনেকটা অভিজাত শ্রেনীর চিন্তকের মত, পরে ছাত্রদের মাঝে প্রচার করা হয় । মার্কস নিশ্চয়ই আজকের পরিস্থিতি বিবেচনায় নেননি। সেই সময়ে ছাত্রদের মাঝে হতাশা না থাকলে ও এখন অনেকেই হতাশায় ভোগেন। কেননা তাদেরকে এখন একেই ধরনের কর্ম করতে বাধ্য করানো হয় বলে মানসিক চাপে বিষাদে ভোগেন ।
মার্ক্সীয় চিন্তার আলোকে দেখলে দেখব যে, মানুষকে এক গেয়ে কাজ করতে হচ্ছে বা বেকার থাকতে হচ্ছে, নানা কারনে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই পেশায় অনুতপাদন খাতে বিরাজ করছে । তাঁর সময়ে কি কোন বিপ্লবী শ্রেনী ছিলো; কেবল যারা উৎপাদন করেন তারাই প্রকৃতিগত ভাবে উদার পন্থী হতে পারেন, কারন তাঁদের শোষন করার দরকার পরে না । পাশ্চাত্যের দেশ সমূহে শিল্পায়ন হয়েছে সেখানে তো পুরাতন ‘বুর্জোয়াদের’ জায়গায় প্রলেতারিয়েত প্রতিস্থাপিত হবার কথা । পুজিবাদিদের জায়গায় শ্রমিক শ্রেনীর আগমনের কথা, বাম পন্থার উত্তরন হবার কথা । ঠিকে থাকার জন্যই বাম রাজনীতির উত্থান হওয়া দরকার ছিলো । কিন্তু পাশ্চাত্যের জগতে আমরা দেখতে পাচ্ছি তাঁর উল্টো রথ চলছে। কায়িক পরিশ্রম হয় এমন কল কারখানা বন্দ্ব করে দিয়ে সুপার মার্কেট, শপিং মল ও দোকান পাঠে বিক্রয় কর্তা বা সহকারী হিসাবে লোক নিয়োজিত হয়েছে। এখন এরা উৎপাদন মূখী নয় এরা এখন কেবল সেবা মূলক কাজ করছেন। যখন শিল্প শ্রমিকদের বিকাশ হতে শুরু করে তখনই এনার্কিস্ট বা নিরাজবাদিদের আন্দোলনের ও সূচনা হয়, কিছু কিছু বিধি শ্রমিক লোকেরাই উদ্ভাবন করে ফেলে, তারাই বাহির থেকে নেতৃত্বের ধারনার ও জন্ম দেয় এবং অনেকেই মনে করেন মুজুর শ্রেনীর ভেতর থেকে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা এদের নেই। এনার্কু সিন্ডিক্যালিজম হল এমন সংস্থা যা কর্ম স্থলের আন্দোলন চালানো এমন কি পরিবেশ পরিস্থিতি সৃজন হলে তা দখল করে নেবার জন্য প্রস্তুত থাকবে। এটা গতানুগতিক ট্রেড ইউনিয়নের চেয়ে অধিকতর কার্যকরী এবং একেই সময়ে রাষ্ট্র পরিচালিত অর্থনীতিকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম ? এনার্কিজম এবং মার্কসবাদ এরা কেহই শ্রমিকদেরকে আদর্শিক ভাবে তেমন উন্নত প্রশিক্ষন দেয় নি ( কেবল প্রচারনামূলক কিছু সাহিত্য ও কিবিতা শ্লোগান শিখিয়েছে)- এটা অনেক টা খৃস্টান সমাজতন্ত্রের মত । এমন কি প্রতিক্রিয়াশীলতাকে এড়াবার জন্য ও সঠিক নির্দেশনা ছিলোনা, অন্যদিকে এদের জন্য সত্যিকার শিক্ষার ও সুযোগ না থাকায় পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে তাঁদের মধ্যেই ছিলো বিরুধিতার প্রবল জোয়ার। ধৈর্য ধরে পড়ার মত পরিবেশ ও তাঁরা পায়নি, ফলে তাঁরা তো মানুষই ফিরিস্তা নন, নৈতিক দিক থেকে ও ছিলেন না খুব উন্নত, ফলে নিজেদের কর্ম ক্ষেত্রেই নিজের ব্যার্থতা পরিস্ফুট হয়ে উঠে। তাই যোগ্যতা অর্জনের ব্যবস্থা করার কোন বিকল্প নেই। কেবল জান্নতেই ফিরিস্তারা চাহিদামত সব কাজ করতে সক্ষম- এই দুনিয়ায় নয়। শ্রমিক শ্রেনীকে দুনিয়ার কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে হবে। এনার্কো-সিন্ডিক্যালিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ সেই কাজ অব্যাহত রাখতে বদ্বপরিকর।
Comments